সোমবার (০৫ জুলাই) সকাল ৯টা ১৫ মিনিট। রায়পুরা উপজেলা থেকে শফিকুল ইসলাম নামে এক স্কুলশিক্ষক তার স্ত্রীকে নিয়ে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে এসেছেন নমুনা পরীক্ষা করাতে। তখনো নমুনা নেওয়া শুরু হয়নি। হাসপাতাল চত্বরে নমুনা দিতে আসা রোগীদেরও বসার কোনো জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে অনেকে পাশের নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ করোনা কর্নারের সামনের স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকেই আবার অসুস্থ শরীরের ক্লান্তি ধরে রাখতে না পেরে নির্মাণাধীন ভবনের কার্নিশ বা মেঝের ইটের ওপর বসে পড়েছেন।

রায়পুরা থেকে আসা শফিকুল ইসলাম আধাঘণ্টারও বেশি সময় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া করা সিএনজিতে বসেই অপেক্ষা করেছেন। সকাল ১০টার পর শুরু হয় নমুনা নেওয়ার কার্যক্রম। 

ততক্ষণে আরও ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ জটলা বেঁধেছেন করোনা কর্নারের সামনে। প্রায় সবাই এসেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে। তবে তাদের সঙ্গে একজন, দুজন করে নিকটাত্মীয়ও এসেছেন অনেকের। সকলেই জটলা বেঁধেছেন এক জায়গায়। এই করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। 

রায়পুরা থেকে আসা স্কুলশিক্ষক শফিকুল ইসলাম স্ত্রীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন একটু দূরে। অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো সিস্টেম হলো? সকাল ৮টায় নমুনা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। ১০টার পর শুরু হয়েছে। কখন সিরিয়াল আসে কে জানে? সবাই আবার গাদাগাদি করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তিন ফুট তো দূরের কথা, অনেকের দূরত্ব ১ ফুটেরও কম। করোনা না থাকলেও নমুনা দিতে এসেই তো এখান থেকে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারি। বলা তো যায় না। আবার রোগীদের বসার কোনো জায়গা নেই এখানে। এগুলোর দিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।’

এদিকে জেলা হাসপাতালের মূল ভবনের গেটের পাশে জমে আছে পানি। জেলা হাসপাতালে ঢুকে মূল ভবনের গেটের দিকে যেতে যতদূর রাস্তা প্রায় সবটুকুতেই পানি জমে আছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে এখানে।

এসব বিষয়ে নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শীতল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন,  ‘আমাদের মূল ভবনের পাশেই আরেকটি ভবনের কাজ চলছে। সেখানে মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের চাপে রাস্তায় সমস্যা হয়েছে। আর গাদাগাদি করে দাঁড়ানো, এটা ভালো নয়। এখানে আমাদের একটা গার্ড থাকলে এমন হতো না। এখন থেকে নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করতে গার্ড থাকবে।’ 

তিনি বলেন, দেরিতে নমুনা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হওয়াটা আমাদের হাতে নেই। সিএস অফিস (সিভিল সার্জন) খোলেই সকাল ৯টায়। সেখান থেকে মালামাল আসতে দেরি হয়। তাই আমাদেরও দেরি হয়। 

আগত রোগীদের বা স্বজনদের বসার কোনো জায়গা না থাকার বিষয়ে যুক্তিসংগত কোনো উত্তর দিতে পারেননি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। 

নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানির বিষয়টি আমি অবগত। ইতোমধ্যে ডিসি স্যারকে নিয়ে আমি পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ভালো জানবেন।  

আরএআর/জেএস