দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের ৫ উপজেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল। দিন দিন হাসপাতালে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও আইসিইউ। ফলে করোনার চিকিৎসা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে।

প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের ছুটতে হচ্ছে দিনাজপুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে অনেক রোগী হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যাচ্ছেন। এ ছাড়া নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।

হাসপাতালে আইসিইউ না থাকার কারণে ফুসফুস আক্রান্ত হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দিনাজপুর কিংবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। শুধু করোনা রোগীই নয়, সড়ক দুর্ঘটনা, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন জটিল সমস্যায় পড়লে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হলেই তাদের রংপুর ও দিনাজপুরে প্রেরণ করা হচ্ছে। এতে বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসাসেবা না পেয়ে পথের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন।

সোমবার (৫ জুলাই) বেলা ১১ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের ব্যস্ততা সরেজমিনে দেখতে যায় ঢাকা পোস্ট।

দেখা গেছে, করোনা টেস্ট করতে আসা মানুষেরা গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য নমুন নেওয়া ছাড়াও এখানে করা হচ্ছে অ্যান্টিজেন টেস্ট। সকাল থেকে ১৪ জনের অ্যান্টিজেন টেস্টের মধ্যে ৯ জন ব্যক্তির শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

একই সময়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা গেছে রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে অনেকে  হাসপাতালের বেডে শুয়ে কিংবা বসে আছেন। দেখে বোঝার উপায় নেই, কে রোগী আর কে স্বজন।

রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে ৫০ থেকে ৬০ জনের নমুনা টেস্ট করা হচ্ছে। করোনা টেস্টে পজিটিভ এলে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে হাসপাতালে আইসিইউ না থাকার কারণে ফুসফুস আক্রান্ত হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দিনাজপুর কিংবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

শুধু করোনা রোগীই নয়, সড়ক দুর্ঘটনা, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ জটিল সমস্যা নিয়ে কেউ হাসপাতালে এলে তাদের রংপুর ও দিনাজপুরে প্রেরণ করা হচ্ছে। এতে অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা না পেয়ে পথের মধ্যে মারা যাচ্ছে। অনেকে তাই করোনা টেস্টও করাতে চান না। গোপন রেখেই চলাফেরা করছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে সাধারণ ও করোনা রোগীর জন্য মোট ১২৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। করোনা আইসোলেশন ইউনিটের জন্য ২০টি বেড রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ আছে ৩৬টি। তবে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ১০ জন চিকিৎসক। 

রোগী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসক সংকটের কারণে তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রয়োজনে নার্সদের ডাকলে কোনো সাড়া পান না তারা। 

হাসপাতালে কথা হয় ভাগ্য রায় ও রফিকুল ইসলাম নামে করোনা রোগীর ২ স্বজনের সঙ্গে। তারা বলেন, আমরা রোগী নিয়ে দুদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। হাসপাতালে ডাক্তার আসে অনেক দেরিতে। নার্সদের ডাকলে তারা সহজে কথা শোনে না। কয়েকবার ডাকার পর তারা আসে আবার চলে যায়। এত বড় হাসপাতাল, অথচ চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে।

হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ করতে অনেক সময়ের ব্যাপার। এ ছাড়া করোনা রোগের প্রধান সমস্যা অক্সিজেন। সেই অক্সিজেন সমস্যার সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট (নির্মাণাধীন) বসানো হয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই প্ল্যান্টের কাজ শেষ হলে সেখান থেকে ৬ থেকে ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন সাপোর্ট পাওয়া যাবে। 

করোনা টেস্ট করতে আসা সোহেল রানা নামের এক যুবক বলেন, করোনার নমুনা দিতে এসে দেখছি মানুষের উপচে পড়া ভিড়। যে যার ইচ্ছেমতো চলছে। জেলার একমাত্র বড় হাসপাতাল এটি। সাধারণ রোগীরাই সেবা পাচ্ছে না, করোনা রোগীর অবস্থা আরও খারাপ। হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ কিছুই নেই৷ 

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় পঞ্চগড়ে আরও ৪৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত ১২২৭ জন।  নতুন করে একজনসহ মোট মারা গেছেন ২৭ জন। 

পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. ফজলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। যা সাধারণ রোগী ও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের প্রদান করা হচ্ছে। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতলের করোনা ইউনিটে ভর্তি আছে, তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে এবং যারা বাড়িতে আইসোলেশন রয়েছে, তাদের মুঠোফোনে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ করতে অনেক সময়ের ব্যাপার। অক্সিজেন সমস্যার সমাধানের জন্য একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট (নির্মাণাধীন) বসানো হয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই প্ল্যান্টের কাজ শেষ হলে সেখান থেকে ৬ থেকে ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন সাপোর্ট পাওয়া যাবে।  যা দিয়ে ২৫০ জন রোগীকে অক্সিজেন সেবা দেওয়া যাবে। 

এনএ/জেএস