কুমিল্লায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিভিন্ন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অক্সিজেন ও আইসিইউর জন্য হাহাকার চলছে। করোনা ওয়ার্ডে সকাল-বিকাল মারা যাচ্ছে রোগী। রোগীর স্বজনদের আর্তনাদ আর আহাজারি হাসপাতালগুলোর পরিবেশ ভারী করে তুলছে। 

সোমবার (০৫ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা, এক ঘণ্টা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্র দেখতে যায় ঢাকা পোস্ট। সেখানে গিয়ে করোনা রোগী, তাদের স্বজন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক।   

হাসপাতালে কথা হয় জাকিয়া বেগম নামে রোগীর এক স্বজনের সঙ্গে। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত। জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কান্দুঘর এলাকা থেকে তারা এসেছেন হাসপাতালে। তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেও এখানে অক্সিজেন সাপোর্ট পাননি তারা। চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছেন বাবা-মেয়ে। 

জাকিয়া বেগম বলেন, ‘আব্বুর অবস্থা খুব খারাপ। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। বার বার অনুরোধ করেও একটু অক্সিজেন পাচ্ছি না।’ 

পরবর্তীতে ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের অনুরোধে ৫ মিনিটের মধ্যে তাজুল ইসলামকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয় হাসপাতাল কর্তৃৃপক্ষ।

হাসপাতালের করোনা ইউনিট থেকে বাবার মরদেহ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন আবুল বাশার নামে একজন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসা আশা করাই বোকামি। বাবা মরে গেছে, এখন আর কী বলব? কপাল খারাপ ছিল ভাই।’

তবে মারা যাওয়া আরেক রোগীর স্বজন বলেন, ডাক্তার-নার্সরা ভালো চিকিৎসাই দিয়েছেন এখানে। কিন্তু আমাদের ভাগ্য ভালো না।

এদিকে সকাল থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে এসেছেন অনেক মানুষ। হাসপাতালের করিডোরে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। এতে এখান থেকেই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।  

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রেজাউল করিম জানান, সোমবার সকালেও হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৩৬টি  বেডের জায়গায় ১৪৯ জন ভর্তি ছিল। আইসিইউর ২০টি ও এইচডিইউর ১০টি বেডেই রোগী রয়েছে। সাধারণ বেডের জন্য রোগীরা আসলে আমরা ভর্তি রাখছি। অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ায় নতুন একটি প্ল্যান্ট চালু করার প্রস্তুতি চলছে।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, আশঙ্কাজনক হারেই হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তরা আসছেন। করোনা আক্রান্তদের ভর্তি নিতে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা ইউনিটে শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। প্রয়োজনে পুরো সদর হাসপাতালই করোনা ডেডিকেটেড করা হবে।

আরএআর/জেএস