মেহেরপুরে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে সাধারণ রোগীর সংখ্যাও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। দিশেহারা হয়ে পড়ছেন রোগীর স্বজন। সাহস আর মনোবলই করোনা রোগীদের সুস্থতার সহায়ক বলছেন চিকিৎসকরা।

করোনা ইউনিটি নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে করোনা রোগী। নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে অন্যকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টার কমতি নেই কারো। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সবই ঠিক আছে।

বামনপাড়ার লুৎফর রহমান করোনা পজিটিভ হয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে ভর্তি আছেন করোনা ইউনিটের আইসোলেশন বিভাগে। বাইরে অপেক্ষা করছেন তারই স্বজন গোলাম মর্তুজা। একটু আগে বিদ্যুৎ চলে গেছে। হাতপাখা নিয়ে ছুটছেন।

তিনি বলেন, করোনা ইউনিটে নিজস্ব কোনো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই। রোগীরা ছটফট করছেন। কখন বিদ্যুৎ আসবে তাও জানা নেই।  করোনা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত বাতাস প্রয়োজন। বিদ্যুৎ না থাকায় বাতাসের অভাবে রোগীদের কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে।

তাদের দাবি, দ্রুত জেনারেটর স্থাপন করার। তাছাড়া করোনা রোগীদের জন্য সব ধরনের সুযোগসুবিধা আছে তা সবই পাওয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবে যা দেওয়ার তা দিচ্ছেন। বাদ বাকি দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে।

করোনা পজিটিভ হয়ে ১৫ দিন ধরে ভর্তি আছেন সাজেদা খাতুন। তার স্বজন রাজু আহাম্মেদ জানান, চিকিৎসক এবং নার্সদের অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে জনবলের সংকট রয়েছে। জনবল বৃদ্ধি করা হলে চিকিৎসার গুণগতমান আরও বৃদ্ধি পাবে।

গাংনীর রুস্তম আলী জানান, তিন দিন আগে তার বড় ভাবিকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করেছেন। চিকিৎসকদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। তবে রোগীর স্বজনদের বাইরে চলাচলের ওপর নজরদারি বা করোনা ইউনিটে প্রবেশের বিষয়ে কড়াকড়ি দেওয়া দরকার। 

করোনা পজিটিভ রোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ভর্তি আছেন চার দিন ধরে। অক্সিজেন সিলিন্ডার হাতে নিয়ে করোনা ইউনিটে প্রবেশ করেন তারই স্বজন রাকিবুল ইসলাম।

তিনি জানান, আইসোলেশন বিভাগে অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে রি-লোড হয়ে আসতে অনেক সময় লাগে। আমরা ১৪ হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় একটি ফার্মেসি থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রেখেছি। প্রয়োজন হলে ব্যবহার করা হবে।

তিনি আরও জানান, সরকারি ওষুধ ছাড়াও প্রতিদিন তিন হাজার টাকার ওষুধ বাইরে থেকে ক্রয় করতে হয়। চিকিৎসকদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। ঘাটতি রয়েছে জনবলের। জনবল বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১৬৮ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৩৬৭ জন। আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা ৫৬২ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছেন ৬২ জন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালে ৪২ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও রয়েছে মাত্র ২৪ জন ডাক্তার। ১৮৪ জন নার্স নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও আছে ১৫০ জন নার্স। আয়া এবং পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে ৪৩ জনের থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৬ জন।

হাসপাতাপলের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা রোগীদের বিষয়ে কারো কোনো অভিযোগ নেই। করোনা ইউনিটে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য গণপূর্ত (পিডব্লিউডি) এর কাছে জেনারেটরের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। দ্রুত আমরা জেনারেটর পেয়ে যাব। তাহলে করোনা ইউনিটে সমস্যা থাকবে না।

সিভিল সার্জন মো. নাসিরুদ্দীন বলেন, চিকিৎসার কোনো ঘাটতি নেই। নিজের জীবন বাঁচিয়ে রেখে অন্যকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টায় চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। ছোট খাটো ত্রুটি থাকতে পারে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।

এমএসআর