যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দিতে এসেছেন ৪০ বছর বয়সী আব্দুর রহিম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ৫ দিন ধরে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছিলাম। শ্বাসকষ্ট বাড়ায় করোনা পরীক্ষা করাতে এসেছি। কিন্তু দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নমুনা দিতে পারিনি। 

সোমবার (৫ জুলাই) যশোরের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবার চিত্র দেখতে যায় ঢাকা পোস্ট। 

দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ বসে আছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করিডোরে। করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় নমুনা দেওয়ার জন্য এসেছেন তারা।

এদেরই একজন আব্দুর রহিম। ২ ঘণ্টা হয়ে গেছে, বসে আছেন। এখনো তার নমুনা নেওয়া হয়নি। চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট জনবল সংকটের কারণে নমুনা সংগ্রহ চলছে ধীরে। দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা মানুষগুলো হাঁপিয়ে উঠেছেন।

এদিকে নমুনা সংগ্রহের স্থানটিতে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। এখান থেকেই সুস্থ মানুষরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে কয়জন চিকিৎসক আছেন, তাদের অধিকাংশই বাইরে চেম্বার খুলে বসে আছেন। সকালে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন কোনো রকমে ডিউটি শেষ করার জন্য। তিনি আরও বলেন, ডাক্তাররা রোগীকে বলেন প্রাইভেট চেম্বারে দেখানোর জন্য।

সেখানেই কথা হয় করোনা আক্রান্ত কবীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন দিন আগে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নমুনা দিয়েছিলাম। আজ রিপোর্ট নিতে এসে জানলাম করোনা পজিটিভ হয়েছি। ডাক্তার প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে বললেন, বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবীর হোসেন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে কয়জন চিকিৎসক আছেন, তাদের অধিকাংশই বাইরে চেম্বার খুলে বসে আছেন। সকালে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে চলে যান। নিজেরা এখানে ভালো চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে প্রাইভেট চেম্বারে যেতে বলেন। 

এদিকে বেনাপোল বন্দর ও গৌড়া পাড়া ইউনিয়নে দুটি ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসাপাতাল থাকলেও সেগুলো ৭ থেকে ৮ বছর ধরে বন্ধ। যে কারণে উপজেলা হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রোগীর তুলনায় এখানে পর্যাপ্ত আইসোলেশন বেড নেই। ফলে বেশিরভাগ রোগীকেই ভর্তি না করে ফেরত পাঠান চিকিৎসকরা। রেফার করেন যশোর বা খুলনায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান অনেক রোগী।

আইসোলেশন বেড যাতে বাড়ানো হয়, সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যারা করোনা উপসর্গ নিয়ে ভুগছেন অথচ পরীক্ষা করাচ্ছেন না, তাদের সচেতন করা হচ্ছে। করোনা আক্রান্তরা কেমন আছেন নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে

আসাদুল ইসলাম নামে একজন জানান, আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, রোগীকে এখানে ভর্তি করা যাবে না। এখানে বেড খালি নেই। আমরা বাধ্য হয়ে তাকে যশোর হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রওনা হই। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগে পথেই বাবা মারা যান। উপজেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত সেবা থাকেলে হয়তো আমার বাবা বেঁচে যেতেন।

বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান জানান, উপজেলায় প্রতিদিন করোনা উপসর্গ নিয়ে ২ থেকে ৩ জন মারা যাচ্ছেন। প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনুরোধ করলেও অনেকেই সচেতন হচ্ছে না।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় শার্শা উপজেলায় ৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে ১৯ জন। আক্রান্তের হার দিন দিন বাড়ছে।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৮৫ জন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা করা আইসোলেশন বেড আছে ২২টি। এরমধ্যে ১২টি ইয়োলো জোনে আর ১০টি আছে রেড জোনে।

ডা. ইউসুফ আলী বলেন, আইসোলেশন বেড যাতে বাড়ানো হয়, সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যারা করোনা উপসর্গ নিয়ে ভুগছেন অথচ পরীক্ষা করাচ্ছেন না, তাদের সচেতন করা হচ্ছে। করোনা আক্রান্তরা কেমন আছেন নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

এনএ/জেএস