সোমবার (০৫ জুলাই) সকাল ১০টা।  শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ভেতর থেকে হঠাৎ কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। পরে জানা যায় সকালে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া আব্দুল মজিদ ছৈয়াল (৭৫) নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। তার স্বজনদের অভিযোগ, অক্সিজেনের অভাবে তিনি মারা গেছেন। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ছৈয়ালের ছেলে মনির হোসেন বলেন, বাবা কয়েকদিন ধরে জ্বর-ঠান্ডায় আক্রান্ত। তার নমুনা পরীক্ষা করা হলে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। গতকাল রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সকালে তাকে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করি। ডাক্তাররা চেষ্টা করলেও অক্সিজেনের অভাবে বাবা মারা গেল। 

তিনি বলেন, ঢাকায় নেওয়ার জন্য বাবাকে গাড়িতে তুলেছিলাম। এ সময় হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন চাইলেও তারা দেয়নি। অক্সিজেনের অভাবে আমার বাবা মারা গেল।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ছৈয়ালের স্বজন মোকছেদ রহমান বলেন, হাসপাতালে শুধু অক্সিজেন আছে। আর কিছু নেই। ডাক্তার আসে আর যায়। চিকিৎসাও নেই। আশপাশে দেখেন কত নোংরা। কোনো হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো সাবান পানির ব্যবস্তা। অক্সিজেনের সিলিন্ডার খালি আনা নেওয়া করছে। এগুলো তে যে কি আছে কে জানে।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালে থেকে দেখা যায়, করোনা ইউনিট থেকে খালি অক্সিজেনের সিলিন্ডার বাইরে আনা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর নতুন সিলিন্ডার ভেতরে ঢুকানো হয়। করোনা ইউনিটে ঢোকার সময় হাত জীবানুমুক্ত করতে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই। লোকজন করোনা ইউনিটে প্রবেশ করছে আর বাহির হচ্ছে। কেউ আবার ভেতরেই জড়ো হয়ে কথা বলছে। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। 

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। সদর হাসপাতালসহ সব হাসপাতালেই আইসোলেশন শয্যা রেডি করে রাখা হয়েছে। রোববার (০৪ জুলাই) জেলায় ৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে দুজনকে আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগীর স্বজন বলেন, প্রতিটি রুমে তিন থেকে চারজন করে রোগী রয়েছে। একজন রোগীর সঙ্গে একজন করে হলেও স্বজন রয়েছে। ছোট রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। রুমে হাঁটার মত কোনো জায়গাও নেই। 

তিনদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজন হাবিবা কানন বলেন, ডাক্তার ও নার্সরা নিয়মিত আসেন। কিন্তু হাসপাতালে অক্সিজেন নেই। রাতে অক্সিজেন শেষ হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে অক্সিজেন পেয়েছি। 

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনীর আহমেদ খান বলেন, সদর হাসপাতালের ১০০ শয্যা বেডের সঙ্গে ডেডিকেটেড ২০ শয্যার করোনা ইউনিট রয়েছে। এখানে বর্তমানে ৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন করোনা পজিটিভ ও চারজনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো আসেনি। করোনা ইউনিটে চারজন ডাক্তার ও ছয়জন নার্স কর্মরত রয়েছেন। 

তিনি বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ অনেক পদ ফাঁকা রয়েছে। অক্সিজেন ঢাকা থেকে রিফিল করে আনতে হয়। অক্সিজেনের মিটার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য অক্সিজেন দিতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। ২০ বেডের জন্য ৩০টি মিটার কেনা হয়েছে। এখন মাত্র ১০টি ভালো আছে। আমি যতটা সম্ভব এসব তদারকি করার চেষ্টা করছি। 

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, অক্সিজেনের অভাব মেটাতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। 

আরএআর