নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার দৃশ্য এটি

বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে ভিড় করে আছেন ওষুধ কোম্পানির একদল প্রতিনিধি। একটু ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল জরুরি বিভাগ। তবে জরুরি বিভাগে নেই কোনো রোগী। আরও একটু ভেতরে কিছু মানুষের ভিড় দেখা গেলো। তারা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিচ্ছেন।

দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা মিলে কয়েকটি কুকুরের। কুকুরগুলো হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আছে। তৃতীয় তলায় করোনা ওয়ার্ড। করোনা ওয়ার্ডের দরজা ভেতর থেকে আটকে দেওয়া। কারণ সেখানে প্রবেশ নিষেধ। দরজার আশেপাশেও পাওয়া যায়নি করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের কোনো আত্মীয়-স্বজনকে।

সোমবার (৫ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের এক ঘণ্টার চিত্র এটি।

এ সময় নমুনা দিতে আসা প্রীমা সরকার নামে নেত্রকোনা সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমার করোনার কিছু উপসর্গ ছিল। এ জন্যই করোনা পরীক্ষা করতে নমুনা দিতে এসেছি।

একই সময় কথা হলে স্থানীয় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাতুল বিশ্বাস সাগর নামে এক যুবক বলেন, আমি ১৫ দিন আগে নমুনা পরীক্ষা করানোর পর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর হোম আইসোলেশনে থেকেছি। এখন সদর হাসপাতালে এসে আবারও নমুনা দিলাম।

বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া করোনা আক্রান্ত এক রোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালেই করোনা চিকিৎসা সেবা একেবারেই অপ্রতুল। তারা শুধু নমুনা সংগ্রহ করে আর রিপোর্ট দেয়। এছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্যই তারা পরামর্শ দেয়। গুরুতর হলে ময়মনসিংহে পাঠিয়ে দেন। তাই সরকারি হাসপাতালের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। যে কারণে হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ৩৬ শয্যাবিশিষ্ট একটি করোনা ওয়ার্ড রয়েছে। তবে সেখানে রোগী ভর্তি আছেন মাত্র ৫ জন এবং জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রত্যেকটিতেই করোনা ওয়ার্ড থাকলেও নেই করোনা রোগী। কেবলমাত্র জেলার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ওয়ার্ডে একজন এবং আটপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া জেলা সদর হাসপাতালে নেই করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব, সেন্ট্রাল অক্সিজেন এবং আইসিইউ ব্যবস্থা। এ অবস্থায় জেলার মোট ৫২৯ জন করোনা রোগী হাসপাতালে না গিয়ে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলায় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন মাত্র ৭ জন।

এ বিষয়ে জেলা সুজনের সভাপতি (সুশাসনের জন্য নাগরিক) শ্যামলেন্দু পাল বলেন, সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীরা কেন থাকবে? হাসপাতালগুলোয় তো করোনা চিকিৎসা একেবারেই অপ্রতুল। নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থাটুকুও নেই। এ অবস্থায় বাড়িতে থেকে চিকিৎসা না নিয়ে তো রোগীর আর কোনো উপায় নেই।

তবে নেত্রকোনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ সেলিম মিঞা বলেন, নেত্রকোনায় করোনা চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।জেলা সদর হাসপাতালে ১২৩টি এবং জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে ২৮টি। এখানে পিসিআর ল্যাব না থাকলেও করোনা পরীক্ষার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন মেশিন রয়েছে দুইটি এবং সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭টি জিন এক্সপার্ট মেশিন রয়েছে। জিন এক্সপার্ট মেশিনগুলো দিয়েও যক্ষ্মার পাশাপাশি করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল হলে আইসিইউ চালু করার ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, নেত্রকোনায় দিন দিন করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনায় নতুন করে আরও ৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১৭৫৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১১৮৭ জন এবং মারা গেছেন ৩২ জন।

এসকেডি