১০০ শয্যার হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ২০ শয্যার ডেডিকেটেড হাসপাতাল

সোমবার সকাল ৮টা। হাসপাতাল এলাকায় সুনসান নীরবতা। প্রধান প্রবেশপথে এক করোনা রোগীর অবাক দৃষ্টির চাহনি। নিজে করোনায় আক্রান্ত, একটু আগে হারিয়েছেন প্রিয়জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মোহম্মদ আলী (৭০)। ভ্যানযোগে স্বজনেরা তাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। 

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের চিত্র এটি। করোনায় কাবু দেশের অন্য সব জেলা হাসপাতালের মতো এখানেও প্রতিদিন চলছে করোনার সঙ্গে লড়াই- রোগীর, রোগীর স্বজনের আর চিকিৎসকের।

সকাল ৯টা। হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দেখা যায়, রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডা. শামিম  আহসান ও সিনিয়র স্টাফ নার্স আব্দুল্লাহ আল মামুন।

কথা হয় আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা রোগীর স্বজনদের সাথে। তারা বলেন, রাজবাড়ীতে করোনার চিকিৎসা অন্যান্য জায়গা থেকে অনেক ভালো। বিশেষ করে এই হাসপাতালেরর ডা. শামিম আহসান ও নার্স মামুনের করোনা রোগে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সুনাম রয়েছে।

জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসক-সংকট দীর্ঘদিনের। পাশাপাশি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ বেশকিছু মেশিন অকেজো। এসব সংকটের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে করোনা রোগের চিকিৎসা।

১০০ শয্যার হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে ২০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল।

রোববার (৪ জুলাই) এই করোনা ইউনিটকে ২০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরও রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী জেলায় কোনো পিসিআর ল্যাব নেই। তাই করোনার নমুনা পাঠাতে হয় ঢাকায়। আবার ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রেয়েছে ৪১টি। তার মধ্যে ২৬টি পদই শূন্য। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই ১২ জন। এসব সংকট নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীর স্বজন বিথি রানী দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা-মা দুজনই করোনায় আক্রান্ত। সকালে ডা. শামিম স্যার এবং মামুন স্যার এসেছিলেন। তারা কাছে থেকেই চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। 

করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে। তবে এখন যেসব রোগী হাসপাতালে আসছে, তাদের প্রত্যেকেরই অক্সিজেন দরকার হচ্ছে। প্রতিদিন রোগীও মারা যাচ্ছে। আমরা জীবন দিয়ে চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা দিতে।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দীপক কুমার বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজবাড়ীতে করোনার সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী। সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ২০ শয্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু রোগীর চাপ অত্যধিক হওয়ায় আমরা শয্যাসংখ্যা উন্নীত করে ৫০টি করেছি। সেই শয্যা দিয়েও রোগীর চাপ সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। একজন করোনা রোগী ছাড়া পেলে অন্য রোগী ভর্তি করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে কী অবস্থা দাঁড়ায় বলা মুশকিল।

উল্লেখ্য, রাজবাড়ীতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২০৮ জন করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৬২০। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৩৯৫ জন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। হোম আইসোলেশনে চিকিৎসারত রয়েছেন ১ হাজার ১১৮ জন। রাজবাড়ীতে এই পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৫ জন।

মীর সামসুজ্জামান/এনএ/জেএস