নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল রিপ্রেজেন্টেটিভদের উপচে পড়া ভিড়। হাসপাতালের সামনে হাত ধোয়ার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটিও অপরিছন্ন, ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি রাস্তায় চলে যাচ্ছে। অপরদিকে বেসিনে কাউকে হাত পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি।

কেউ আবার বেসিন দেখেও না দেখার ভান করে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করছেন আবার কেউ হাসপাতাল থেকে হাত না ধুইয়েই রাস্তায় বের হচ্ছেন। সরেজমিনে সোমবার (৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।

এদিকে সদর হাসপাতাল করোনা রোগীতে ঠাসা। এ অবস্থায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৭০ বেডের বিপরীতে বর্তমানে ৮২ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ এতই বেশি যে কয়েকজন মেঝেতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আবার অনেক গুরুতর অসুস্থ রোগীও এখানে ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ কমাতে জেলার সব উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২ জুলাই) জেলা প্রশাসনের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভা শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, সদর হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে নেই কোনো আইসিইউ। অনেক চিকিৎসকসহ নার্সরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে ইয়েলো জোনে রাখা হতো।

পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হলে রাখা হয় রেড জোনে। আর নেগেটিভ হলে পাঠানো হয় হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডে। তবে শয্যাসংকটের কারণে সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না। করোনার উপসর্গ নিয়ে এলে নমুনা নিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন, এমন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

হাসপাতালের নির্ধারিত ৭০টি শয্যা অনেক আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে। সদর হাসপাতালে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৮২ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন। এ অবস্থায় নতুন রোগীদের হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থাও নেই।

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় বলেন, হাসপাতালে ওষুধের কোনো সংকট নেই। করোনা রোগীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ৯২টি এবং ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ২৮৩টি। অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই।

বেসিনের ব্যাপারে সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় বলেন, রাস্তা সংস্কার না হওয়ার কারণে ড্রেনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। তবে অচিরেই ড্রেনের ব্যবস্থা করা হবে।

সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে জেলার সর্বত্রই করোনা রোগী বাড়ছে। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ধনী-গরিব সবাই আছে। কয়েক দিন আগেও অনেকে ভাবতেন, এই রোগ গ্রামে ঢুকবে না, গরিব মানুষ সংক্রমিত হবেন না। এখন তাদের ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালগুলোর সার্বিক অবস্থা ভালো রয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় তাদের খোঁজ রাখছি। আমরা চাই সবার সমন্বয়ে করোনা মোকাবিলা করতে।

এমএসআর