বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে নাটোর জেলা পুলিশ/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

নাটোরে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও শনাক্তের সংখ্যা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। রোগীর চাপে এরই মধ্যে জেলা হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। অক্সিজেন সংকট করোনা আক্রান্ত রোগীর কষ্ট বাড়িয়েছে আরও কয়েকগুণ।

এ অবস্থায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের কষ্ট কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে নাটোর জেলা পুলিশ। চালু করা হটলাইন নম্বরে ফোন দিলে ১০ মিনিটের মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগীর বাসায় হাজির হন পুলিশ সদস্যরা। এ উদ্যোগের ফলে উপকৃত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এ সেবা চালুর মাত্র ১২ দিনের মধ্যেই শতাধিক রোগীর বাড়িতে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নাটোর জেলাজুড়ে দেখা দেয় অক্সিজেন সংকট। এ অবস্থায় মানুষের কষ্ট লাঘবে ‘অক্সিজেন ব্যাংক’ গঠনের উদ্যোগ নেন জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। এরপর গত ২৩ জুন শহরের বড় হরিশপুর এলাকায় জেলা পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে মাত্র ৫১টি সিলিন্ডার নিয়ে ‘অক্সিজেন ব্যাংক’ উদ্বোধন করেন রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন। এ সময় হটলাইন হিসেবে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নম্বর (০১৩২০-১২৪৫০৩ ) চালু করা হয়। এ নম্বরে কল করলেই হাসপাতাল কিংবা বাসায় অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে নাটোর জেলা পুলিশ। অক্সিজেন সরবরাহ ও রোগী বহনের জন্য পুলিশ লাইন্সে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সসহ চারটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাণ এগ্রো লিমিটেড, আকিজ গ্রুপ ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরীসহ বিভিন্ন বিত্তশালীদের সহযোগিতায় এ অক্সিজেন ব্যাংক চালু করেন নাটোরে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। শুরুতে ৫১টি সিলিন্ডার নিয়ে অক্সিজেন ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে চাহিদা বাড়তে থাকলে বাড়ানো হয় অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যাও। বর্তমানে ছোট-বড় মিলে মোট ১৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রয়েছে অক্সিজেন ব্যাংকে।

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বর্তমানে ৩২টা সিলিন্ডার দিয়ে জেলা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অক্সিজেন সরবরাহ করছে জেলা পুলিশ।

অক্সিজেন ব্যাংকের হটলাইন নম্বরে কল দিলে রিসিভ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফোন কলের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্বোধনের পর দিনে ৪-৫টা কল আসলেও বর্তমানে হটলাইন নম্বরে ১৫ থেকে ২০টি কল আসছে। এছাড়া পুলিশ সুপার স্যার এবং জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে অনেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার চাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এই অক্সিজেন ব্যাংক থেকে শতাধিক মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে।

শহরের কানাইখালী মহল্লার রাসেদুল ইসলাম রাসু বলেন, নাটোর পুলিশের এ অক্সিজেন ব্যাংক যদি না থাকত তাহলে আমার বাবা ও মা অক্সিজেনের অভাবেই মারা যেতেন। আমার বাবা-মার শ্বাসকষ্ট দেখে অক্সিজেনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিই। কিন্তু কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছিল না। তখনই নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাকে কল দিলে গভীর রাতে অক্সিজেন নিয়ে আমার পরিবারের পাশে দাঁড়ান পুলিশ সদস্যরা। এরপর অক্সিজেনের জন্য যখনই ফোন করেছি ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ সদস্যরা অক্সিজেন নিয়ে বাসায় হাজির হয়েছেন।

শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ হলে আমি পুলিশের অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা নিই। পুলিশ সদস্যরা যেভাবে এ কাজে এগিয়ে এসেছেন, সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, তা অনেকেই করতে পারে না। এ রকম কাজে সমাজের সবারই এগিয়ে আসা উচিত। এ জন্য আমি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে কৃতজ্ঞ।

শহরের আলাইপুরের গৃহবধূ নাজমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী শ্বাসকষ্টের রোগী। কয়েকদিন আগে মধ্য রাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে আমি সরাসরি নাটোরের পুলিশ সুপারকে কল দেই। এরপর মাত্র ১০ মিনিটে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে উপস্থিত হন পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অক্সিজেনের অভাবে অনেকেই মারা যায়। এটা আমাদের অনেক কষ্ট দেয়। অক্সিজেন সংকটে যেন কেউ মারা না যায়, সেই চিন্তা থেকে অক্সিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি। রোগীর অবস্থান যদি নাটোর শহরের মধ্যে হয়, তাহলে ১০ মিনিটের মধ্যে তার কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে পৌর শহরের বাইরে সিলিন্ডার পৌঁছে দিতে কিছুটা বেশি লাগতে পারে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দিন ধরে সদর হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় সেখানে অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয়। তাই আমাদের অক্সিজেন ব্যাংক থেকে বর্তমানে ৩২টি সিলিন্ডার হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা এ সেবা চালু থাকছে। এছাড়া রোগী পরিবহনেও দুটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিনামূল্যে সিলিন্ডার সেট, টেকনোলজিস্ট সাপোর্ট ও প্রয়োজন শেষে সিলিন্ডার ফেরত নিয়ে আসার সেবাও দিচ্ছে জেলা পুলিশ।

তাপস কুমার/এসকেডি