হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানার সামনে স্বজনহারা নারীর কান্না

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের সেজান জুসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে স্বজনহারাদের কান্না যেন থামছে না। ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও তারা ভুলতে পারছেন না এই মর্মান্তিক ঘটনা। পুড়ে অঙ্গার স্বজনের হাড়গুলো নিতে তারা একবার ছুটছেন ঢাকা মেডিকেলে আবার আসছেন কারখানার সামনে। কারখানার আগুনে এখনো পুড়ছে স্বজনহারা পরিবারগুলো। 

নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা জানান, এমন অগ্নিকাণ্ড আগে কেউ দেখেনি। সর্বনাশা যে আগুন শ্রমিকদের পুড়ে অঙ্গার করে দিয়েছে সেই আগুনে এখনো জ্বলছেন তারা। 

কারখানার সামনে কথা হয় কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে। এদেরই একজন শামীমা, বয়স ১৩-১৪ হবে। কারখানার আগুনে বড় বোন শাহানাকে হারিয়ে দিশেহারা সে। কাঁদতে কাঁদতে চোখের নিচে দাগ পড়ে গেছে। সে জানায়, তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার জশুদা এলাকায়। গ্রামের বাড়িতে কোনো কাজ না থাকায় বাবা নিজাম উদ্দিন তাদের ৫ বোনকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকে তারা। অভাবের তাড়নায় সংসার চলে না, তাই এই কারখানায় কাজ নেয় তারা দুই বোন।

বলতে বলতেই হঠাৎ ডুকরে কেঁদে ওঠে শামীমা। বলে, ‘‘বোনের স্মৃতিগুলো কিছুতেই ভুলতে পারছি না। মনে হচ্ছে এখনো বুঝি কারখানার জানালা দিয়ে আমাকে ডাকছে, আর বলছে ‘শামীমা আমাকে বাঁচা’ ...।’’ 

কারখানার গেটে দাঁড়িয়ে ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে কান্না করছিলেন রাজীব নামে এক শ্রমিক। কেঁদে কেঁদে ছেলেকে বলছেন- ‘তর মা আর কখনো আসবে নারে বাবা, আর আসবে না।’

আগুনে মারা গেছেন রাজীবের স্ত্রী আমেনা (২২)। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একসঙ্গে ওই কারখানায় কাজ করতেন। 

রাজীব জানান, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি হাসেম ফুডসের কারখানায় হট ফিলিংয়ে কাজ করতেন। তার স্ত্রী আমেনা (২২) একই কারখানার আইসপপে কাজ করতেন। আগুন লাগলে কারখানার ছাদে চলে যান আমেনা। পরে বাঁচার জন্য সেখান থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েন। আহতাবস্থায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। 

‘কোরবানি ঈদকে ঘিরে আমেনার অনেক স্বপ্ন ছিল’.. বলতে গিয়ে আবার ডুকরে কেঁদে ওঠেন রাজীব। বলেন, ‘কারখানায় পাঁচ মাসের ওভার টাইমের টাকা বকেয়া থাকায় গত রোজার ঈদেও আমেনা বাবার বাড়ি যায়নি। ভেবেছিল এই ঈদে যদি ওভার টাইমের টাকা পায় তাহলে সবার জন্য কিছু কিনে নিয়ে বাড়িতে যাবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।’ 

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সোমবার (১২ জুলাই) দুপুরে কারখানা পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আলামত সংগ্রহ করেন এবং শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। 

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেন, রোববার (১১ জুলাই) থেকে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আমরা ঘটনাস্থল থেকে নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছি। এ পর্যন্ত ১৪ জন শ্রমিকের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। 

বিকেল ৪টার দিকে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা আলমত সংগ্রহসহ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এছাড়া বিকেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ হাসেম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের খোঁজ নিতে ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুসরাত জাহান উপস্থিত ছিলেন। 

মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া/আরএআর/জেএস