মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু থাকলেও তাতে খুব একটা সাড়া মিলছে না। অনলাইন ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। ফলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই অনলাইনে টানা ক্লাস নিতে পারছে না।

এছাড়া অনলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকরাও সন্তুষ্ট নন। ঘরে বসে পরীক্ষা দিয়ে মেধার বিকাশ হচ্ছে না বলে তারা মনে করছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১১৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর কিন্ডার গার্টেন স্কুল আছে ৯৯০টি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সপ্তাহে পাঁচদিন গুগল মিটের মাধ্যমে ক্লাস করানো হয়। পাঁচটি বিষয়ে প্রতিদিন ক্লাস হয় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। সবগুলো বিদ্যালয়েই অনলাইন ক্লাস চলমান আছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই নগণ্য। ফলে নিয়মিত ক্লাস করানো হচ্ছে না।

জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২৬৫টি। সবগুলোর অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু আছে। প্রতিদিন শিডিউল অনুযায়ী সব বিষয়েই ক্লাস নেওয়া হয়। তবে প্রাথমিকের মতো মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদেরও অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ কম। যদিও প্রাথমিকের তুলনায় জেলা ও উপজেলা সদরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরশাদুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, ছেলে জেলা শহরের সূর্যমুখী কিন্ডার গার্টেন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু করলেও নিয়মিত সে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয় না। এছাড়া অনলাইনে যে প্রক্রিয়ায় পাঠদান চলছে, তাতে করে শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক বিকাশ হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

রাতুল নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, অনলাইনে ক্লাস করতে তার ভালো লাগে না। কারণ সশরীরে স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস করার যে আনন্দ, সেটি অনলাইনে পাওয়া যায় না। তার অনেক বন্ধুই অনলাইন ক্লাসে নিয়মিত আসে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গুগল মিটের মাধ্যমে সব বিদ্যালয়েই পাঠদান কার্যক্রম চলছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। সবার স্মার্টফোন নেই। তবে এখন শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি সপ্তাহে ওয়ার্কশিট দেওয়া হচ্ছে। ক্লাস করার জন্য একেকটি শ্রেণিতে ৩০-৪০ জনের প্রয়োজন হয়। ৪-৫ জন শিক্ষার্থী দিয়ে তো ক্লাস করানো সম্ভব না। সেজন্য নির্দেশনা আছে ৪-৫টি বিদ্যালয় মিলিয়ে একসঙ্গে যে কয়েকজন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়, তাদেরকে নিয়ে ক্লাস করানোর।’

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উদ্দিন বলেন, জেলা সদর ও উপজেলা সদরের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৫০-৬০ শতাংশ। মাঠ পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। তবে প্রতিদিনই ক্লাস নেওয়া হয়।

আজিজুল সঞ্চয়/এমএইচএস