প্রায় আড়াই শ বছরের পুরোনো মন্দির

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কাচারী পয়রাডাঙ্গা এলাকায় অবস্থিত প্রায় আড়াই শ বছরের পুরোনো মন্দিরটি অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে। কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সোনাহাট স্থলবন্দর মহাসড়কের পাশে ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ভবানী পাঠকের এই মঠ বা মন্দির।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৬০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত পলাশীর যুদ্ধের পর এই মন্দির থেকেই ভবানী পাঠকের নেতৃত্বে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সন্নাসীরা। এ জন্য এটিকে ভবানী পাঠকের মঠ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে

মন্দিরের ভেতরে দেবী মূর্তি

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৬০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত পলাশীর যুদ্ধের পর এই মন্দির থেকেই ভবানী পাঠকের নেতৃত্বে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সন্নাসীরা। এ জন্য এটিকে ভবানী পাঠকের মঠ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে ও বিভিন্ন গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৭৭০ থেকে ১৭৭২ সালের মধ্যে এই শিবমন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। ওই সময় ফকির মজনু শাহের সহযোগী ভবানী পাঠক শিবমন্দিরটি নির্মাণ করেন। ভবানী পাঠক ছিলেন রংপুরের পীরগাছা এলাকার মন্থনার জমিদার জয় দুর্গাদেবী চৌধুরানীর নায়েব। ভবানী পাঠকের বাড়ি ছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঠকপাড়ায়।

স্থানীয় বেশির ভাগ মানুষ এটাকে মন্দির হিসেবেই জানে এবং আগে স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে পূজা-অর্চনা করতেন। কেউ কেউ এটাকে শিবমন্দির, কামাক্ষ্যা মাতা ঠাকুরানী মন্দির, আবার কেউ কেউ এটিকে জয় দুর্গাদেবী চৌধুরানীর আস্তানাও বলে থাকেন

কেউ কেউ এটাকে শিবমন্দির, কামাক্ষ্যা মাতা ঠাকুরানী মন্দির বলেন 

স্থানীয় বেশির ভাগ মানুষ এটাকে মন্দির হিসেবেই জানে এবং আগে স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে পূজা-অর্চনা করতেন। কেউ কেউ এটাকে শিবমন্দির, কামাক্ষ্যা মাতা ঠাকুরানী মন্দির, আবার কেউ কেউ এটিকে জয় দুর্গাদেবী চৌধুরানীর আস্তানাও বলে থাকেন। তবে ধসে পড়ার ভয়ে কেউ এর ভেতরে পূজা-অর্চনা করেন না। কিন্তু কবে নাগাদ এটি তৈরি করা হয়েছিল, তা জানা নেই তাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার কাচারী পায়রাডাঙ্গা গ্রামে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে অবহেলায়-অযত্নে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন এ মন্দিরটি। এর ওপরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ডালপালা মেলে আছে। ক্ষয়ে গেছে ইটও। মন্দিরের ভেতরে রাখা আছে দেবীর মূর্তি। কিন্তু যেকোনো সময় মন্দিরটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজ থেকে অনেক বছর আগে জঙ্গলের ভেতর থেকে এ মন্দিরটি আবিষ্কার করে স্থানীয়রা। তারপর থেকে পূজা-অর্চনা চলে আসছে এই মন্দিরে। তবে সংস্কারের অভাবে বর্তমানে এই মন্দিরের অবস্থা একেবারের ভঙ্গুর হয়ে পড়ায় কয়েক বছর ধরে ভয়ে আর কেউ এর ভেতরে প্রবেশ করছেন না।

অনেক পুরোনো এ মন্দিরটি সরকারিভাবে সংস্কার করা হলে এখানে ভালোভাবে পূজা করা যেত। এটির ইতিহাস সম্পর্কে সবাই জানতে পারত। আমরা মন্দিরটি সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি

গণেশ চন্দ্র দাস, স্থানীয় বাসিন্দা

যেহেতু মন্দিরটি মহাসড়কের পাশে, সংস্কার হলে খুবই ভালো হতো বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দা দীনেশ চন্দ্র দাস, এই মন্দির সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি, এটা প্রাচীনকালের মন্দির। কিছুদিন আগে শুনেছি এটা সন্নাসীর মন্দির। পরে আবার শুনলাম এটি শিবমন্দির। তবে আগে এই মন্দিরে পূজা-অর্চনা হয়েছিল, এখন আর হয় না। ধসে পড়ার ভয়ে কেউ ভেতরে প্রবেশ করে না।

আবার কেউ কেউ এটিকে জয় দুর্গাদেবী চৌধুরানীর আস্তানাও বলে থাকেন

স্থানীয় বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র সরকার বলেন, আমাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে শুনেছি মন্দিরটি নাকি দেবী চৌধুরানীর আখড়া ছিল। তারপর সন্নাসীরা এসে এখানে পূজা-অর্চনা করতেন। এখন কিছুই হয় না। আর্থিক সংকটের কারণে আমরাও সংস্কার করতে পারছি না। এটি সংস্কার করা হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এর ইতিহাস সম্পর্কে জানত এবং ধর্মীয় ব্যাপারে উপকৃত হতাম। এটি সংস্কার করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

গণেশ চন্দ্র দাস বলেন, অনেক পুরোনো এ মন্দিরটি সরকারিভাবে সংস্কার করা হলে এখানে ভালোভাবে পূজা করা যেত। এটির ইতিহাস সম্পর্কে সবাই জানতে পারত। আমরা মন্দিরটি সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর আহমেদ মাছুম বলেন, সংস্কারের জন্য এ মন্দিরগুলোর তালিকা আমরা ছবিসহ পাঠিয়ে দিয়েছি। সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, তাহলে সংস্কার করা হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, সংস্কারের জন্য মন্দিরভিত্তিক তো দফতর আছে, তারা বিষয়টি দেখবে। আমিও প্রাচীন এ মন্দিরটির খোঁজ নেব।

এনএ