ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হচ্ছে। মামলার সকল কাগজপত্র সিআইডি নারায়ণগঞ্জকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। 

এদিকে হাসেম ফুডস লিমিটেডের মালিক আবুল হাসেম ও কারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) শ্রম আদালতে মামলাটি করেন শ্রম পরিদর্শক নেছার উদ্দিন আহম্মেদ। 

জানা গেছে, এর আগেও গত ৩০ জুন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর নারায়ণগঞ্জ অফিসের সহকারী শ্রম পরিদর্শক সৈকত মাহমুদ বাদী হয়ে শ্রম আইনের নয়টি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় মামলা করেছিলেন সেজান জুস কারাখানার বিরুদ্ধে। 

মামলার বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেন, যে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমাদের জানাতে হয়। কিন্তু কারখানার মালিক তা করেননি। তাই আমরা আজ একটি মামলা দায়ের করেছি। পাশাপাশি এখন আমরা ওই কারখানায় নিহত এবং আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দিতে মালিককে বলবো। তারা যদি ক্ষতিপূরণ না দেয় তবে আমরা আরও মামলার প্রস্ততি নেব।

গত ৩০ জুন সহকারী শ্রম পরিদর্শক সৈকত মাহমুদের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, কারখানায় করোনা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জীবাণুনাশক (সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, জীবানুনাশক স্প্রে) ব্যবহার না করা, শিশুশ্রমিক নিয়োগ, কারখানার পূর্ব দিকের ছয় তলার কক্ষে নির্মল বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকা, পরিদর্শক কর্তৃক কাজের সময়সূচির নোটিশ অনুমোদন না করা, কার্যকর সেফটি কমিটি না থাকা, যন্ত্রপাতি স্থাপনের ক্ষেত্রে দেয়াল থেকে দেয়ালের দূরত্ব এক মিটার না রাখা, অনুমোদিত নকশার সঙ্গে বর্তমান কারখানার মেশিন আউট-লেট প্ল্যানের সামঞ্জস্য না থাকা, বর্তমান শ্রমিক সংখ্যানুপাতে লাইসেন্স ক্যাটারি সঠিক না থাকা এবং ভবনের ভেতরে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকার বিষয় রয়েছে। 

এর মাধ্যমে কারখানাটি শ্রম আইনের ধারা-৯১ বিধি ৮৬, ধারা ৩৪ (১), ধারা ৫৬, ধারা ১১১ (৮), ধারা ৯০ (ক), বিধি-৩২৬, ধারা-৩৫৬, ধারা-৬১ লঙ্ঘন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী দণ্ডবিধি ৩০৩, ৩০৭ ও ৩০৯ ধারায় অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হাসেম ফুডস লিমিটেডের সেজান জুসের কারখানায় আগুন লাগে। এতে ৫২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

রাজু আহমেদ/আরএআর