কাজিরহাট ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ৫ শতাধিক যানবাহন
বিধিনিষেধ শিথিল করায় সড়কে বেড়েছে পরিবহনের চাপ। সেই চাপ লক্ষ্য করা গেছে ফেরিঘাটগুলোতেও। আরিচা-কাজিরহাট ফেরিঘাটে যানবাহনকে পারাপারের জন্য ৮-১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঘাটে বর্তমানে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক যানবাহন। সমস্যা নিরসনে কাজ করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (১৭ জুলাই) সকাল ৮টায় কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ পল্টুন ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ থাকায় যানবাহন পারাপারে ধীরগতি রয়েছে। তবে সম্প্রতি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এই রুটে আরও একটি ফেরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সেটি ঘাটে চলাচল শুরু করলে যানজট কমে আসবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, এই রুট এখন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। বঙ্গুবন্ধু সেতু রুটে দীর্ঘ যানজটের কারণে পাবনাসহ আশপাশের জেলার মানুষ এ নদীপথকে বাছাই করে নিয়েছে। ফলে নৌপথে হঠাৎ যাত্রী এবং যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
সরেজমিনে কাজিরহাট ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফেরিতে উঠতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে আসা যাত্রীরা। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকও যানজটে আটকা পড়েছে। অনেক পশু ট্রাকের ভেতরে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এসব পশু হাট পর্যন্ত পৌঁছানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যাপারি-খামারিরা।
বিজ্ঞাপন
শিপন মনিরুজ্জামান নামে এক স্থানীয় যুবক জানান, ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ, মাইক্রোবাস, দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাকে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঘরমুখো মানুষের আনন্দের ঈদযাত্রা বিষাদে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও অনেকে ফেরি পারাপার হতে পারেনি। পশুবাহী ট্রাকের অবস্থাও একই।
পাবনা সদরের হলুদবাড়িয়া এলাকার খামারি আব্দুল আলিম বলেন, আমি সাতটি গরু নিয়ে গাবতলী পশুর হাটে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি যানজট। ৮-৯ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফেরির সিরিয়াল পাইনি। এদিকে ঈদেরও আর মাত্র কয়েকদিন আছে। আগে আগে হাট ধরতে না পারলে গরু বিক্রি হবে না।
মুক্তার হোসেন নামে আরেক ব্যাপারী বলেন, সড়ক পথে অতিরিক্ত যানজটের কারণে দ্রুত যাওয়ার জন্য ফেরি পারাপার হয়ে ঢাকার গাবতলী হাটে যাচ্ছি। কিন্তু এখানকার চিত্রও একই। কখন যে ঢাকায় পৌঁছাতে পারব, এটা নিয়ে টেনশনে আছি। গরু নিয়ে বিপদেই আছি। অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে।
পাবনা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রাকের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই ঘাটে আগেও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছি। ঘাটের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ এই চালক বলেন, তিন ঘণ্টার রাস্তার জন্য এখন আমাকে প্রায় দেড় দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শুক্রবার ভোরে আসছি। ঘাটের সিরিয়ালই পাচ্ছি না। আল্লাহ জানেন কখন নাগাদ ফেরিতে উঠতে পারব। হাজার হাজার মানুষ এই রুট দিয়ে চলাচল করলেও মাত্র তিনটি ফেরি চলাচল করাই আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আরও কয়েকটি ফেরি চালু করার দাবি জানান তিনি।
গাবতলী এলাকায় কর্মরত পোশাক শ্রমিক নাসরিন পারভীন বলেন, ১০ দিনের ছুটি নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পাবনার উদ্দেশে রওনা দেই। আরিচা ঘাট পাওয়ার আগেই ৫ ঘণ্টার যানজটে থাকতে হয়েছে। পরে কোনোমতে ঘাটে এসেছি। ফেরিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ৩ ঘণ্টা বসে থেকে ফেরিতে উঠছি। কাজিরহাট ঘাটে এসে দেখি কোনো গাড়ি নেই। সব গাড়ি যানজটে আটকে গেছে।
তবে ঘাট কর্তৃপক্ষের দাবি, কাজিরহাট-আরিচা ফেরিঘাটে জনগণ তেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে না। সবাই ঠিকমতো পারাপার হচ্ছেন।যানজট থাকলেও ফেরি কয়েকটা বাড়ালে এ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহাবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পল্টুনকে আমরা ঝুঁকিমুক্ত করে ঘাটের পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছি। স্বাস্থবিধি মেনে সবাইকে ফেরিতে উঠতে হচ্ছে। মাস্ক না পড়লে তাকে ফেরিতে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।
তবে গাড়ি পারাপারে ধীরগতি ও ঈদে বাড়তি মানুষের চাপ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যানজটমুক্ত রাখার জন্য। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিরসনে আমরা কাজ শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার (১৬ জুলাই) দুপুরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আমাদের একটি ফেরি দেওয়ার কথা বলেছেন। সেটি চালু হলে পারাপারে গতি বাড়বে, যানজটমুক্ত হবে।
রাকিব হাসনাত/এসপি