এক হাজার টাকা খুঁজে পাচ্ছিলেন না বিল্লাল মোল্লা। তাই চোর শনাক্তে এলাকার নাজু বেগমের কাছ থেকে চাল পড়া আনা হয়। দেওয়া হয় বাটি চালান। 

আদিম এই কুসংস্কারের সহায়তায় চোর শনাক্ত করা হয় দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ থাকা প্রতিবেশী মৃত কালাম খানের ছেলে শফিক খানকে (১৪)। স্থানীয় সালিশে মারধর করা হয় ওই কিশোরকে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এদিকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে নানার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ‘বাটি চালানে চোর সাব্যস্ত’ হওয়া শফিক।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১৪ জুলাই) বিকেলে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের যুগিহাটি গ্রামে।

মারধরের শিকার শফিক খানের মা রেহেনা বেগম বলেন, যারা আমার ছেলেকে মারধর করেছে তাদের সঙ্গে পূর্বে থেকেই আমাদের বিরোধ চলে আসছিল। মূলত সেই বিরোধের সূত্র ধরে আমার ছেলেকে চোর সাব্যস্ত করে নির্যাতন করেছে। আমার ছেলে কোনো টাকা-পয়সা চুরি করেনি।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমাদের জব্দ করার জন্য, এলাকা ছাড়া করার জন্য সালিশ বসিয়ে নির্যাতন করেছে। আমি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। কিন্তু নিজেদের প্রাণের নিরাপত্তার জন্য বর্তমানে আমার বাবার বাড়ি বাবুগঞ্জে ছেলেসহ আশ্রয় নিয়েছি।

জানা গেছে, রেহানা বেগমের প্রতিবেশী বেল্লাল মোল্লার ঘর থেকে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) এক হাজার টাকা হারানো যায়। তারা অভিযোগ করেন, রেহানা বেগমের ছেলে শফিক খান টাকা চুরি করেছে। চোর সাব্যস্ত করতে একই এলাকার হানিফ হাওলাদারের মেয়ে নাজু বেগমকে দিয়ে বুধবার বাটি চালান ও চাল পড়া খাইয়ে শফিককে চোর সাব্যস্ত করা হয়। বাটি চালানের সূত্র ধরে স্থানীয় কয়েকজন শফিককে মারধর করেন। মারধরকারীরা হলেন- বেল্লাল মোল্লা, জলিল মোল্লা, জহুরুল হাওলাদার ও ইসমাইল হাওলাদার।

অভিযুক্ত বিল্লাল মোল্লা বলেন, আমার ঘর থেকে টাকা চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় বাটি চালান ও চাল পড়া দিলে শফিক চোর সাব্যস্ত হয়। এরপর টাকা দেওয়ার জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয়। সালিশের উপস্থিত ব্যক্তিরা হয়তো চড়-থাপ্পড় দিয়েছেন। চোরকে না মারলে টাকা ফেরত পাব কীভাবে?

এ ঘটনায় রেহানা বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) উজিরপুর থানায় মারধরকারীদের নামে মামলা দায়ের করেছেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আরশাদ জানান, মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।  আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আশা করি দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/ওএফ