চা-দোকানি আব্দুল গফফার

সরকারি দফতরে লিখিত আবেদন করে খাদ্যসহায়তা চেয়েও কোনো সহায়তা পাননি চা-দোকানি আব্দুল গফফার। অন্যদিকে ৩৩৩-এ খাদ্যসহায়তার জন্য সাত দিন চেষ্টা করেও কর্তৃপক্ষের সংযোগ পাননি পরিবহনশ্রমিক মো. মিলন। করোনার প্রভাবে লকডাউনে বিপর্যন্ত ও দুর্দিনে থাকা মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তার কথা বলা হলেও ভিন্ন কথা বলছেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। তারা প্রশ্ন রেখে বলছেন, সরকার এত সহায়তা দিচ্ছে, তাহলে সেসব পাচ্ছে কারা?

সাতক্ষীরা পৌরসভার পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকাকার বাসিন্দা আব্দুল গফফার। শহরের রাজ্জাক পার্কের গেটে এক ছোট্ট চায়ের দোকান রয়েছে তার। এই দোকান থেকেই উপার্জিত রোজগারে চলে পাঁচজনের সংসার। অভাবের তাড়নায় খাদ্যের সহায়তা চেয়ে ৬ জুলাই সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করেন তিনি। তবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত এখনো কোনো সহায়তা পাননি আব্দুল গফফার।

চায়ের দোকানি আব্দুল গফফার জানান, করোনা বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ জুন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে। এরপর আবার সরকার সারাদেশেই লকডাউন ঘোষণা দেয়। দোকানে চা বিক্রি করে উপার্জিত টাকায় সংসার চলে আমার। লকডাউন দেওয়ার পর দোকানটি লুকিয়ে মাঝেমধ্যে খুলেছি সংসার চালানোর তাগিদে। তবে একটু পরপর পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট এসে বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকটা নিরুপায় হয়ে খাদ্যসহায়তার আশায় সাতক্ষীরা সদর ইউএনও স্যারের কাছে আবেদন করি। তবে আজও কোনো সহায়তা আমি পাইনি।

তালা সদরের মাঝিয়াড়া গ্রামের বাসচালক মিলন সরদার। দুই ছেলে স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সংসার তার। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। লকডাউনের মধ্যে বাস বন্ধ থাকায় জমা টাকা শেষ হওয়ার পর নিরুপায় হয়ে পড়েন। টানা সাত দিন সরকারের জরুরি খাদ্যসহায়তা ৩৩৩-এ কল করে হতাশ হয়ে এখন আশা ছেড়ে দিয়েছেন এই বাসশ্রমিক।

মিলন সরদার বলেন, শুনেছিলাম করোনার সময়ে অসহায় মানুষদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে আমি তো কিছুই পেলাম না। টানা সাত দিন ৩৩৩-এ কল করেও যোগাযোগ করতে পারিনি। কল দিলেই বলে, আপনি ১৫০ জনের পরে আছেন। এক ঘণ্টা পরে যোগাযোগ করুন। এক ঘণ্টা পর কল দিলেও সেই একই কথা বলে। এভাবে কেটে গেছে সাত দিন। এখন কল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। সরকারের এত সহায়তা পাচ্ছে কারা, প্রশ্ন রাখেন মিলন।

তালা সদরের মাঝিয়াড়া গ্রামের দিনমজুর আফসার আলী। অভাবের তাড়নায় এলাকার আরও ১৫ থেকে ২০ জন অসহায় মানুষদের তালিকা করে সহায়তার জন্য আবেদন দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। তবে সেখানেও মেলেনি কোনো সহায়তা। 

দিনমজুর আফসার আলী বলেন, আমি গরিব মানুষ। করোনায় লকডাউনে পড়ে রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো সহায়তা পাইনি। ইউনিয়ন ভোটের দিনক্ষণ দিয়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান চেয়ারম্যানের বিপক্ষ দলের সমর্থন করায় তিনি আমাকে সহায়তা করেন না। বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে এলাকার ১৫ থেকে ২০ জনের ভোটার আইডি কার্ডসহ ১০ দিন আগে আবেদন করেছিলাম। তাতেও কোনো সহায়তা মেলেনি।

পরিবহনশ্রমিক মো. মিলন

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালীন লকডাউনে আটকে পড়া দিনমজুর, চায়ের দোকানিসহ কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের খাদ্য ও নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যা এখনো চলমান রয়েছে। কতজনকে এই পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে, সেটি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তারিফ-উল-হাসান বলেন, ৩৩৩ আমরা কন্ট্রোল করি না। সেন্ট্রাল থেকে নাম এন্ট্রির পর আমাদের মেসেজ দেয়। তারপর সেটি যাচাই করে আমরা সহায়তা প্রদান করি। তা ছাড়া কেউ আবেদন করেও যদি সহায়তা না পান, সেটি হয়তো কোনো কারণে ভুল হয়েছে। যাচাই করে অবশ্যই তাদের জরুরি খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে।

আকরামুল ইসলাম/এনএ