কোনো কাজই ছোট নয়। আমাদের যেকোনো কাজকে বড় করে দেখার মানসিকতা নেই- এটাই আমাদের বেকারত্ব সমস্যার অন্যতম কারণ। এটাই আমাদের দীনতার একমাত্র কারণ। রসায়ন শাস্ত্রে অনার্সসহ মাস্টার্স করা তৌহিদুল ইসলাম শাকিল এমনটাই মনে করেন। তাইতো তিনি লেখাপড়া শেষ করে একদিনও বেকার বসে না থেকে বাবার চায়ের দোকানে কাজ করছেন, চা বানিয়ে নিজেই পরিবেশন করছেন। চায়ের দোকানে কাজের পাশাপাশি তিনি টিউশনও করেন। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। এভাবেই এনটিআরসিএ কর্তৃক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হন শাকিল।

শাকিল বলেন, স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করার স্বপ্ন নিয়েই আমি আমার সাধ্যমতো পড়াশুনা করেছি। আমি বিশ্বাস করি, চাকরি আমার একদিন হবেই। কিন্তু চাকরি না হওয়া পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও অলস সময় কাটাতে চাই না। তাছাড়া আমাদের আর্থিক অবস্থাও বেশ খারাপ। আমার আরও দুই ভাই-বোন লেখাপড়া করে। তাদের পড়ার খরচ যোগাতে আমার বাবা হিমশিম খায়। তাই সকাল-বিকেল বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করি।

পাবনার বেড়া উপজেলার মাশুমদিয়া কলেজ বাজারে চায়ের দোকান রয়েছে তৌহিদুল ইসলাম শাকিলের বাবার। তার বাবা মজিদ মোল্লা একসময় পরিবহন শ্রমিকের কাজ করতেন। প্রায় ১৩ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন তিনি। সংসার চালাতে তিনি কলেজ বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান দেন। শাকিল তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। ওই সময় থেকেই তিনি বাবাকে চায়ের দোকান চালাতে সাহায্য করে আসছিলেন। 

একদিকে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকান চালানো, অন্যদিকে পড়াশোনা। এভাবেই তিনি বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রসায়ন শাস্ত্রে বিএসসি সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে। সেখানে পড়াশোনা করার ফাঁকে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানটি তিনি চালিয়ে গেছেন। অনার্স পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার পর শাকিল চায়ের দোকানে কাজের সময় আরও বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি তিনি টিউশনও করেন। আর টিউশন করতে গিয়েই তিনি পেশাগতভাবে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) রাতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বাংলাদেশে বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ করে। ওই ফলাফল অনুযায়ী- শাকিল বেড়া উপজেলার আমিনপুর আয়েনউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। 

শাকিল বলেন, একসময় কেউ কেউ আমার চা বানিয়ে বিক্রি করার বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখতেন। কিন্তু এখন অনেকেই বাহবা দেন। একদিকে আমি টিউশন করেছি, অন্যদিকে চায়ের দোকানটিও চালিয়েছি। আমার কাছে দুটি কাজই সম্মানজনক। এখন স্কুলে স্থায়ী চাকরির সুযোগ পেলাম- এটিই হবে আমার একমাত্র পেশা। তার মতে, কাজ না করে বেকার বসে থাকাটা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবার জন্যই অসম্মানের।

শাকিলের দোকানে নিয়মিত চা পান করতে আসেন মাশুমদিয়া-ভবানীপুর কে.জে.বি ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক। তারা বলেন, শাকিল সব ধরনের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠা অসম্ভব পরিশ্রমী এক তরুণ। কোনো কাজই যে ছোট নয়, তা ও প্রমাণ করেছে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য তিনি অবশ্যই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

রাকিব হাসনাত/এসপি