গ্রেফতার সবুজ হোসেন

বিদেশে শ্রমিক পাঠানো, আকামা এবং ভালো কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৯ জনের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় একজনকে গ্রেফতার করেছে নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশ।

শনিবার (১৭ জুলাই) সকালে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলাটি করেন নওগাঁ সদর উপজেলা শিকারপুর ইউনিয়নের চকরামকানু গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিন মন্ডলের ছেলে সিরাজুল ইসলাম।

পরে রোববার (১৮ জুলাই) পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি সবুজ হোসেনকে দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন,  শিকারপুর ইউনিয়নের চককালিদাস গ্রামের মৃত কমর উদ্দিন সরদারের ছেলে মো. সবুজ হোসেন (৩০), একই গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলী সদরদারের ছেলে মো. আব্দুল খালেক (৫৫), মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে মো. আবুল কালাম আজাদ (৪০) এবং মৃত কমর উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ওরফে ভুদি (৪৮)।

মামলার এজাহারে সিরাজুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তার ছেলে রুবেল হোসেনকে গত বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে ভালো বেতনে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন প্রধান আসামি সবুজ হোসেন। এরপর তার কথামতো ৬ লাখ টাকা তার মা রাবেয়া বেগমের (৪ নং আসামি) কাছে জমা দেয়। ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে রুবেল হোসেনকে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে তার কাছে রেখে ভালো কাজ ও বৈধ কাগজপত্র করে দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কাজ ও বৈধভাবে কাজের অনুমতি নিয়ে দিতে পারেনাই। বর্তমানে অবৈধভাবে সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

আরও জানা যায়, স্থানীয় চক কালিদাস গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আয়নাল হোসেন (২৮), আব্দুল জব্বারের ছেলে হোসেন আলী (২৫), মৃত আতোয়ার রহমানের ছেলে জিয়াউর রহমান, গোয়ালী গ্রামের ইয়াদ আলী মন্ডলের ছেলে আইজুল মন্ডল, রঘুনাথপুর গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে জুয়েল হোসেন (৩২), রমজান আলীর ছেলে সাইদুল ইসলামের (৩৩) কাছ থেকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় ৭৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সবুজ হোসেন।

এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে রুবেল হোসেনকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমার কাছে থেকে ৬ লাখ টাকা নেয় সবুজ হোসেন। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আমার ছেলে নেওয়ার পর কোনো বৈধ কাগজপত্র ও ভালো কাজ না দিয়ে পাসপোর্টসহ জরুরি কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে তার তত্ত্বাবধানে কাজে নেয় কিন্তু বিনিময়ে কোনো প্রারিশ্রমিক দেয় না। শুধু সামান্য কিছু খাবার খরচ দেয়।

তিনি বলেন, আমার ছেলে অন্য স্থানে কাজের কথা বললে নানাভাবে ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বর্তমানে আমার ছেলে অনিরাপত্তায় ও মানবেতর জীবন যাবন করছে। বিষয়টি নিয়ে সবুজের বাড়িতে গেলে আমাদের তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমরা জোরালো প্রতিবাদ করলে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়।

সৌদিতে অবস্থানকারী প্রতারিত আয়নাল হোসেনের বাবা আব্দুল লতিফ বলেন, আমার ছেলেকে সৌদিতে ভালো কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০২০ সালের জুন মাসে ৭ লাখ টাকা নেয়। সেই সময় প্রতারক সবুজ সৌদিতে ছিল। টাকাগুলো তার কথা অনুযায়ী তার মা রাবেয়া বেগমকে দিয়েছিলাম। এর আমার ছেলেকে সৌদি নিয়ে কাজ তো দূরের কথা, কোনো বৈধ কাগজ করে দেয়নি। এখানে যে কর্মরত কোম্পানির নিয়োগপত্র পাঠিয়েছিল, তা পুরোটাই ছিল ভুয়া। কিন্তু আমারা সেটা কেউই বুঝতে পারিনি।

সৌদিতে অবস্থানকারী প্রতারিত সাইদুল ইসলামের স্ত্রী নিপা বেগম বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আমার স্বামীকে সৌদিতে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়ে যায়। তারপর আবার কাগজপত্র (আকামা) ঠিক করার কথা বলে আরও তিন লাখ টাকা নেয়। ৬ মাস তার মাধ্যমে কাজ করিয়ে ৩ লাখ টাকা পাওনা হয়েছে আমার স্বামী, সেটাও দেয়নি। আমরা গরিব মানুষ। বাড়িতেও টাকা দিতে পারছে না। অনেক কষ্টে আমাদের সংসার চলছে। আমরা সবুজসহ প্রতারকদের সঠিক বিচার চাই।

নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল জানান, বিদেশে শ্রমিক পাঠানো, প্রবাসী শ্রমিকদের আকামা এবং ভালো কাজ পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে মানব পাচার দমন আইনে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান আসামি সবুজ হোসেনকে গ্রেফতার করে রোববার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য তিন আসামি বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

শামীনূর রহমান/এনএ