সুবিধাবঞ্চিত বিধবা খুকু মনির নাম উঠেছিল প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকা দেওয়ার তালিকায়। সমাজসেবা অফিসে নিজের মোবাইল নম্বরও দিয়ে এসেছিলেন নিশ্চিত করে। কিন্তু চার কিস্তির এক কিস্তিও পাননি তিনি। পরে যোগাযোগ করে জানতে পারেন টাকা ঠিকই তার নামে যাচ্ছে; কিন্তু তা অন্যের নম্বরে।

বরিশাল জেলার উজিরপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। শুধু খুকু মনি নন; এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। অবশেষে সুবিধাবঞ্চিতরা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ভাতা না পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় ঘেরাও করেছেন। 

বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, অফিস ঘেরাও নয়, টাকা না পেয়ে কিছু মানুষ এসেছিলেন কার্যালয়ে। আমরা বলেছি তাদের সমস্যার সমাধান করে দেব।

ভাতাবঞ্চিত খুকু মনি বলেন, এমআইএস ফরম পূরণ করে নগদ অ্যাকাউন্টে আমার (০১৯৫৯৮৪৪১৭৮) মোবাইল নম্বর দিয়েছিলাম। কিন্তু গত চার মাসেও একটি টাকা আসেনি। সমাজসেবা অফিস থেকে আমাকে জানায়, আমার দেওয়া নম্বরের পরিবর্তে ০১৭৯১৬২৬০২৮ নম্বরে টাকা চলে গেছে।

তিনি বলেন, এ নিয়ে ৪ মাস ধরেই অফিসারদের কাছে ধরনা ধরেছি। তারা সমাধান করে ‘দিবে-দিচ্ছি’ বলে ঘুরাচ্ছেন। কিন্তু কোনো সমাধান করে দেননি। এত ভুলতো হতে পারে না। শত শত মানুষ আজ সেখানে গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী গরিবকে টাকা দেয়। কিন্তু সেই টাকা আমাদের মোবাইল নম্বর চিনে না; যায় অন্যের নম্বরে, এটা মিথ্যা কথা।

এ ছাড়া জল্লা ইউনিয়নের বিধবা প্রমিলা পান্ডের নিজের মোবাইল নম্বর (০১৭৫৩৩১৮৫৫১) দিলেও টাকা চলে গেছে ০১৭২৮৮৬৩৬৬২ নম্বরে। বয়স্ক ভাতাপ্রাপ্ত অমল বাড়ৈ মোবাইল নম্বর (০১৩০৫৩৫৪২৯১) দেওয়া থাকলে টাকা চলে গেছে ০১৩১৭০১১৮০৯ নম্বরে।

একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ফুলমালা রানির নিজের মোবাইল নম্বর (০১৮৪৫৬৫২৩৭৭) দেওয়া থাকলেও টাকা চলে গেছে ০১৮৭৫৬৫২৩৭৭ নম্বরে। ফুলরানির মোবাইল নম্বর (০১৩০৫৩৫৮৮৬৮) দেওয়া থাকলেও টাকা চলে গেছে ০১৭৪৬৩৯৪৩৭১ নম্বরে। 

মুকুন্দ ঘরামীর মোবাইল নম্বর (০১৩২৩৬৪০৬৫৩) দেওয়া থাকলেও তিনি কোনো টাকা পাননি। টাকা না পাওয়া তালিকায় রয়েছেন প্রতিবন্ধী মিরা রানী সরকার, বয়স্কভাতার ফটিক পান্ডে।

এ ছাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাসিনা বেগমের বই নম্বর ১৭৭২, হেনা বেগমের বই নম্বর ২৬১৫, বড়াকোঠা ইউনিয়নের মালিকান্দা গ্রামের বয়স্কভাতার গ্রাহক সোবাহান বেপারী (বই নম্বর ৪৩১৪), প্রতিবন্ধী রাশিদা বেগম (বই নম্বর-২৯২৪), বয়স্কভাতার গ্রাহক আনোয়ারা বেগম (বই নম্বর ৬১১৪) কোনো টাকা পাননি।

অপরদিকে তুলসী রানী মিস্ত্রী (বই নম্বর ১৫০৪), শাহে আলম মৃধা (বই নম্বর ৩৩৩৫/১), প্রতিবন্ধী শাহজাহান বেপারী (বই নম্বর ২১৯৭), বয়স্কভাতাপ্রাপ্ত নূরে আলম খলিফা (বই নম্বর ৫৭৪৮/১), প্রতিবন্ধী ফাতেমা খাতুন (বই নম্বর ১৬৯৮), শিকারপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বয়স্কভাতার গ্রাহক মানিক হাওলাদার (বই নম্বর ১৯১৭) আজ পর্যন্ত মোবাইল নম্বর বিভ্রাটের কারণে টাকা পাননি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ. মজিদ সিকদার বাচ্চু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকা পাচ্ছেন না অনেকেই, এমন অভিযোগে কিছু সুবিধাবঞ্চিত কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাদের কথা আমি শুনেছি এবং বলেছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান করা হবে। এ নিয়ে কারও গাফিলতি থাকলে আমরা সেটিও দেখব।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা অত্যন্ত অল্প সময়ে ভাতাভোগীদের তালিকা করেছি। এতে কিছুটা ভুল হতে পারে। উজিরপুর উপজেলায় ২৩ হাজার ৫০২ জন ভাতাভোগী রয়েছেন। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসেন তাদের সমস্যার কথা জানাতে।

অন্যের মোবাইল নম্বরে টাকা চলে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ভুল হয়নি এমন না। তবে অধিকাংশ সময়ে যারা ভাতা পাবেন তারা নিজেদের আত্মীয়স্বজনের নম্বর দিয়ে রাখেন। ফলে তার নম্বরে না গিয়ে অন্যের নম্বরে চলে যায়। তারপরও যারা অভিযোগ জানাতে আসেন তাদের সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএসআর