বৃহস্পতিবার কারখানার ছুটির পর শিল্পাঞ্চল-অধ্যুষিত গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভিড় বেড়েছে যাত্রীদের। সোমবার রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মহাসড়কে তাদের ভিড় বাড়তে থাকে। পরিবহন-সংকটে থাকায় ঈদে ঘরে ফেরা এসব মানুষ খোলা ট্রাক, পিকআপ ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চলাচল করতে দেখা গেছে।

পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও এসব যানে চলাচল করছে। অতিরিক্ত চাপে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট লক্ষ করা গেছে। এদিকে সকালে থেকে অঝোরধারার বৃষ্টি ঈদে ঘরে ফেরা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। বৃষ্টির বাগড়া থেকে রক্ষা পেতে তাদের ছাতা ও পলিথিন ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

সকাল ৬টায় গাজীপুরের চন্দানা চৌরাস্তা থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন গার্মেন্টস কর্মী রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, বাসার থেকে বের হয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও বাস না পেয়ে খোলা ট্রাকে উঠেছেন। অন্য সময় বাস ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হলেও এখন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি ট্রাকে উঠেছেন। পথিমধ্যে বৃষ্টির হতে পারে ভেবেই বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই ছাতা সাথে নিয়েই বের হয়েছেন।

অপর যাত্রী আমিনুল ইসলাম জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী থেকে পাঁচ বন্ধু ময়মনসিংহের ত্রিশালের উদ্দেশে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় রওনা হয়েছে। এতে ঝুঁকি থাকলে যান স্বল্পতার কথা জানিয়েছেন তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।

ময়মনসিংহগামী সোনার বাংলা পরিবহনের চালক মো. মামুন জানান, ভোরে রাজধানীর মহাখালী থেকে রওনা হয়েছে। বেলা ১১টায় পর্যন্ত তিনি রাজেন্দ্রপুর এলাকায় এসেছেন পৌঁছেছেন। মহাসড়কের বনানী, কাকলী, আব্দুল্লাহ্, টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, বোর্ড বাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর বাইপাস পার হতেই তার সময় চলে গেছে।

একই দুর্ভোগে কথা জানান আলম এশিয়া পরিবহনের চালক রুহুল আমিন। তিনি জানান, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যেতে ঈদের বাজারে যাত্রী না থাকায় ঢাকা থেকে সকালেই ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা দেন। ময়মনসিংহের যাত্রীর নামিয়ে সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকায় থাকার কিন্তু গাজীপুর পার হতেই ১২টা বেজে গেল।

মহাসড়েকর মাওনা চৌরাস্তা থেকে ৪০০ টাকা ভাড়ায় খোলা পিকআপে ত্রিশালের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন দোকান কর্মচারী নাজমুল ইসলাম। সে জানায়, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে গাড়ি না পেয়ে অবশেষে খোলা পিকআপেই রওনা হয়েছে। গাড়ি ছাড়ার কিছু সময় পরই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছি। এখন ভেজা পোশাকেই রওনা হয়েছি।

পিকআপচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, সঙ্গে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করায় মোড়ে মোড়ে যানজটের তৈরি হচ্ছে। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করছে না বলে তিনি জানান।

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, অতিরিক্ত চাপ সামলাতে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশের ২০ জন সদস্য রাতভর কাজ করছেন। এখনো তারা কাজ করছেন। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কোনো গাড়ি দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। সবার ঈদযাত্রা আনন্দময় করতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

শিহাব খান/এনএ