বরিশাল নগরীর সাগরদী দারুসুন্নাত মাদরাসা ও এতিম খানার হাফেজ মাওলানা নুরুল আমিন ৪৪টি গরুর এবং ৮টি ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন ঈদের দিন। সন্ধ্যায় পদ্মাবতীর একমাত্র চামড়ার বাজারে নিয়ে গেলে বিনামূল্যে দিয়ে আসতে হয়েছে ছাগলের ৮টি চামড়া।

যে কয়টি চামড়ার পাইকারি দোকান আছে সবগুলোতে ঘুরেও কারো কাছ থেকে ছাগলের চামড়ার বিনিময়ে ‘পান খাওয়ার’ টাকাও পাননি তিনি। বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকালে ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলছিলেন নুরুল আমিন।

তিনি বলেন, চিন্তা করেছিলাম ৮টি চামড়ার বিনিময়ে অন্তত ২০০ টাকা পাব। কিন্তু দোকানদার নিলই না। শেষে বলেছিলাম, ভাই ৮টি চামড়া রেখে দিয়ে অন্তত পান খাওয়ার টাকা দিন। তাতেও রাজি হননি দোকানি। শেষে বিনামূল্যে পাইকারের দোকানে দিয়ে এসেছি। আর ৪৪টি গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ১৪ হাজার টাকায়।

মাওলানা নুরুল আমিনের মতো এমন অভিজ্ঞতা প্রান্তিকপর্যায়ে চামড়া সংগ্রহকারীদের। আর অর্থের অভাবে ইচ্ছা থাকলেও কিনতে পারছেন না পাইকারি ক্রেতারা। কারণ ট্যানারি মালিকরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের পাওনা বছরের পর বছর ধরে আটকে রেখেছেন। 

গরুর চামড়ায় মূলধন উঠলেও ছাগলের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারি মালিক পর্যন্ত পৌঁছাতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ব্যয় হবে। অথচ ট্যানারি মালিকরা প্রতি পিস ছাগলের চাড়মার দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা দিতে পারে। এই লোকসানের কথা চিন্তা করে ছাগলের চামড়া রাখছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

কথাগুলো বলেন বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের সমিতিতে ৫৩ জন ব্যবসায়ী ছিলেন। এখন তিনজন আছি। আমরা সকলেই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব। ইতিমধ্যে ৫০ জনের মত চামড়া ব্যবসা বদলে পোশাকের ব্যবসা শুরু করেছেন। আমরা যারা রয়েছি তারাও ব্যবসা বদল করব। শুধু পাওনা টাকা তুলতে এখনো চামড়া কিনছি।

তিনি আরও বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। অথচ তারা বকেয়া পরিশোধ করেন এক লাখ/দুই লাখ করে। বাচ্চু মিয়া বলেন, সরকার ট্যানারি মালিকদের ঋণ দেন। অথচ যারা চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই লাখ টাকার ওপরে ক্রয় করা গরুর চামড়া সর্বোচ্চ বিক্রয় হয়েছে ৫০০ টাকায়। দুই লাখ টাকার নিচের ক্রয় করা গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ৭০ হাজার থেকে লাখ টাকায় ক্রয় করা গরুর চামড়া ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়। ৭০ হাজার টাকার নিচে ক্রয় করা গরুর চামড়ার দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।

বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সহ-সম্পাদক জিল্লুর রহমান মাসুম বলেন, কয়েক বছর আগেও গরুর চামড়া ৫০০ থেকে আড়াই হাজার টাকায় কিনতেন। আর ছাগলের চামড়া কিনতেন ২০০ থেকে ৭০০ টাকায়। অথচ চামড়ার মূল্য ধসে এখন গরুর চামড়া সাড়ে তিনশ টাকায় ক্রয় করাও কষ্টের। আর ছাগলের চামড়ার কোনো বাজারই নেই।

কাশিপুর আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা ২০টি গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম। পাইকারি বাজারে এসে তা ৬ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। প্রতিটি চামড়া ৩২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।

তিনি বলেন, পাইকারি দোকানি আমাদের আগেই মোবাইলে জানিয়েছিলেন যেন ছাগলের চামড়া না সংগ্রহ করি। তারা ছাগলের চামড়া গাঙে ফেলে দিতে বলেছেন। এ জন্য আমরাও চামড়া সংগ্রহ করিনি।

পাইকারি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর চামড়ার দাম বেশি দিয়ে কিনছেন। এ বছরে ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দরে গরুর চামড়া কিনছি। গত বছর প্রতি পিস চামড়া ১০০ থেকে ৪০০ টাকায় কিনেছিলাম।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএসআর