সারাদেশে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। এই বিধিনিষেধে ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা এখন জনশূন্য। সকালের দিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে কিছুটা যানজট থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা হতে শুরু করে। এছাড়াও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কও ফাঁকা রয়েছে। 

শুক্রবার (২৪ জুলাই) সকালে ঘাট এলাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এ সব বাস ও ট্রাক রাত থেকেই ফেরিঘাটে এসে আটকে ছিল। ঘাট এলাকায় দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ফেরি পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে আটকে থাকে এসব যানবাহন। পরবর্তীতে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় আটকে থাকা সব যানবাহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করে দেওয়া হয়। 

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় ঘাটের চিত্র। বেলা ১১টার পর থেকে ঘাট এলাকায় কোনো দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস দেখা যায়নি। ঘাটে জরুরি সেবার আওতায় কিছু পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক একেবারেই ফাঁকা। এ সময় মহাসড়কে কোনো দূরপাল্লার বাস ও গণপরিবহন দেখা যায়নি।

স্থানীয় মজিদ শেখের পাড়ার বাসিন্দা আলাউদ্দিন শেখ বলেন, গত ১ সপ্তাহ আগে ঘাটে কয়েকদিন প্রচুর লোকজনের সমাগম থাকলেও আজকে ঘাট একেবারেই ফাঁকা। আগের লকডাউন ও আজকের লকডাউনের চিত্র পুরোপুরিই ভিন্ন। সব দোকানপাট বন্ধ। নেই হকারদের হাঁকডাক, যেন ভুতুরে এক ঘাট।

স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী সুরুজ মন্ডলের সঙ্গে কথা হয় ঘাট এলাকায়। আলাপকালে তিনি বলেন, লকডাউনে ঘাট বন্ধ থাকলে আমাদেরও ব্যবসা বন্ধ থাকে। ঘাটে যাত্রীরা না থাকলে হোটেল খুলে কী করবো? খাবার খাওয়ার লোকতো নেই। গত বছর করোনার শুরু থেকেই ব্যবসায় মন্দা। এই বছরও একই অবস্থা। আমরা এই বার না খেয়ে মরব। সরকার তো আমাদের কোনো অনুদান দেয় না। তাহলে আমরা কীভাবে চলবো বলেন। 

রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) তারক চন্দ্র পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ টহল দিচ্ছে। আজকে মহাসড়কে কোনো যাত্রী নেই। রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন বিনা কারণে মহাসড়কে চলাচল করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েকদিন ঘাটে যাত্রীর চাপ থাকলেও আজকে ঘাট এলাকা একেবারে ফাঁকা। তবে জরুরি পরিষেবায় অ্যাম্বুলেন্স ও কিছু পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার হচ্ছে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার (২৩ জুলাই) ভোর ৬টা পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৮৬৩টি যানবাহন নদী পার হয়েছে। এর মধ্যে দূরপাল্লার বাস পার হয়েছে ৯৩৩টি, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস পার হয়েছে ৪ হাজার ৭৮০টি ও পণ্যবাহী ট্রাক পার হয়েছে ১৫০টি। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে ৭০০ মোটরসাইকেল নদী পার হয়েছে। আর যাত্রী পার হয়েছে ৩ হাজার ৪৯১ জন। বর্তমানে এই নৌরুটে ছোট-বড় মিলে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে।

মীর সামসুজ্জামান/আরএআর