বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। এর মধ্যে শরণখোলা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড়ে ৯৩ দশমিক ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বর্ষাকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতিরও আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

শরণখোলা উপজেলার তালবুনিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, রায়েন্দা বাজারের পূর্ব এলাকা ও বান্ধাকাটাসহ সাউথখালির বিভিন্ন নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে। এদিকে বাগেরহাট পৌর শহরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মাছ। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি।

এ ছাড়া শরণখোলার বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, বাগেরহাটের ভৈরব, দড়াটানাসহ সব নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বেড়েছে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার শেখ বাদশা নামের একজন বলেন, রাতে বৃষ্টি হয়েছে। সকালে উঠে দেখি রাস্তায় হাঁটুপানি। অনেকের দোকানের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকার সড়কে পানি উঠে যায়। এ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই। একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।

হাড়িখালী মাঝিডাংগা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সোহরাব হোসাইন রতন বলেন, শুধু বৃষ্টি নয়, জোয়ার হলেই এলাকায় পানি উঠে যায়। দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের। জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা রোধ করা যায়। তা না হলে আমাদের দুর্ভোগ কখনো যাবে না। 

শরণখোলা উপজেলার তালতলী এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সবুর বয়াতি, আবুল হারেস খানসহ কয়েকজন বলেন, বৃষ্টির ফলে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। ঘরের ভেতরে পানি উঠে গেছে। কখন পানি নামবে বুঝতেছি না। রান্না-খাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।

চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া বিলের মাছচাষি জাহিদুর রহমান বলেন, কয়েক দিন আগেই ইয়াসের পানিতে আমাদের ঘের-বাড়ি তলিয়ে যায়। অনেক টাকার মাছ ভেসে গেছে সেই সময়। এখন যদি ঘের আবার তলিয়ে যায়, তবে আমাদের পথে বসতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বাগেরহাটের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটে অবিরাম বৃষ্টিতে আউশ-আমনের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে শরণখোলা উপজেলায়। এ ছাড়া জেলায় গড়ে ৯৩ দশমিক ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যদি এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তবে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবীর জানান, সুন্দরবনে পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রজনন কেন্দ্র এলাকার পাকা রাস্তায় এক থেকে দেড় ফুট পানি ছিল। তবে সকাল থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

তানজীম আহমেদ/এনএ