রংপুর অঞ্চলের দেড় কোটির বেশি মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল। বর্তমানে মহামারি করোনার দাপটে এ হাসপাতালে বেড়েছে রোগী ভর্তির চাপ। দিন দিন বাড়ছে অক্সিজেনেরও চাহিদা।

চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, দুই যুগেরও বেশি পুরাতন পাইপ লাইনগুলো থেকে এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছে না। এতে প্রায়ই অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে করোনায় আক্রান্ত আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৭৪৮ জন।  শনাক্ত বিবেচনায় আক্রান্তের হার ২৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত ২৮ দিনে বিভাগে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৬৯ জন। গতকালের তুলনায় বিভাগে করোনায় মৃত্যু কমলেও শনাক্ত বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মোতাহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রংপুরের তিনজন, দিনাজপুরের তিনজন, কুড়িগ্রামের দুইজনসহ লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁওয়ের একজন করে রয়েছেন।

এ সময়ে বিভাগে ২ হাজার ৬১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দিনাজপুরের ১৮০ জন, রংপুরের ১৭৬ জন, কুড়িগ্রামের ৮১ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৮০ জন, পঞ্চগড়ের ৭৭ জন, গাইবান্ধার ৭০ জন, নীলফামারীর ৫৯ জন ও লালমনিরহাট জেলার ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

নতুন করে মারা যাওয়া ১১ জনসহ বিভাগে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯৩ জনে। এর মধ্যে দিনাজপুরে ২৬৫ জন, রংপুরে ১৯২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৭১, নীলফামারীতে ৬৪, পঞ্চগড়ে ৫৪, লালমনিরহাটে ৫৪, কুড়িগ্রামে ৫১ ও গাইবান্ধায় ৪২ জন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬০৪ জন।

বিভাগের আট জেলায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯৮৬ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দিনাজপুুরে ১২ হাজার ৪৪৬ জন, রংপুরে ৯ হাজার ৪৫৫ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ হাজার ৮৯৬ জন, গাইবান্ধায় ৩ হাজার ৬৭৬ জন, নীলফামারীর ৩ হাজার ৪২৭ জন, কুড়িগ্রামের ৩ হাজার ৩৩২ জন, লালমনিরহাটের ২ হাজার ১৬৬ জন এবং পঞ্চগড়ের ২ হাজার ৫৮৮ জন রয়েছেন।

করোনাভাইরাস শনাক্তের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রংপুর বিভাগে ২ লাখ ১৩ হাজার ২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বিভাগের আট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুর, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। এছাড়া ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা জেলাগুলোয় বেড়েছে শনাক্ত ও মৃত্যু।

এদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রতি দিন বিভাগে হাসপাতালগুলোতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জনের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাবে ধরছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। বর্তমানে বিভাগের হাসপাতালগুলোতে সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য মিলছে না আইসিইউ বেড। দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সংকটও।

অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা বলছেন, হাসপাতালের পুরাতন হয়ে যাওয়ায় অক্সিজেন সরবরাহ পাইপ লাইনগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন পাচ্ছেন না রোগীরা।

অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যাওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে আরও ১০ হাজার লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একেএম নুরুন্নবী লাইজু ঢাকা পোস্টকে জানান, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। বর্তমানে একশ শয্যার রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ৯৪ জন এবং রমেক হাসপাতালে ৭১ শয্যার ইউনিটে ৫৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগের আট জেলার সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ৪৬টি। এর মধ্যে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ১০টি (সচল ৮টি), রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি এবং দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি শয্যা রয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর