পাবনা জেলার করোনা পরিস্থিতি ধারণ করেছে ভয়াবহ আকারে। সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি। প্রতিদিনই ৫ থেকে ১৫ জন রোগী মারা যাচ্ছেন। গ্রামগঞ্জের ঘরে ঘরে জ্বর ঠান্ডা আক্রান্ত রোগী। এ কারণে চাহিদা বেড়েছে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের। ঠিক এই সময়ে বাজারে সংকট চলছে নাপা গ্রুপের ওষুধের।

শহরের বড় বড় ফার্মেসিগুলোতেও মিলছে না নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা অ্যাক্সটেন্ড ও নাপা সিরাপ জাতীয় ওষুধ। দু-একটি ফার্মেসিতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ মিললেও তা ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে চড়া দাম দিয়ে।

ক্রেতারা বলছেন, সংকট দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করছেন। আর ওষুধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানি থেকেই নাপার সাপ্লাই নেই। চলমান লকডাউনের কারণে ঠিকমতো ওষুধের গাড়ি পৌঁছাতে না পারায় মাঝেমধ্যে এমন সংকটের দেখা দিয়েছে। ব্যাপক যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে ওষুধ সরবরাহকারী পরিবহনগুলোকে।

পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের মেডিসিন কর্নার, ঔষধ বিতান, ঔষধ বিপণন, সিটি মেডিকেল, ড্রাগস সেন্টার, ড্রাগ এন্ড সার্জিকেল সেন্টার, মোহাম্মদীয়া মেডিকেল হলসহ বড় বড় ওষুধের মার্কেট ও দুবলিয়া বাজারের মৈত্র মেডিকেল হল, বৃন্দাবন মেডিসিন, আতাইকুলার খান মেডিকেলসহ বেশ কিছু এলাকার ফার্মেসি ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।

তাদের দাবি, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ফার্মেসিতে নাপা গ্রুপের ওষুধ নেই। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন।

ঔষধ বিতানের রতন, ওষুধ ব্যবসায়ী রকি, রনি, আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের ফার্মেসিতে প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেল নাপা গ্রুপের কোনো ওষুধ বিক্রি করি নাই। কোম্পানি তাদের প্যারাসিটামল সরবরাহ করছে না। অর্ডার কাটতে আসলে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানিয়ে দেয়, এসব ওষুধ নেই। তাদের দাবি, জ্বর-ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় এক পাতার পরিবর্তে একেকজন ১০ পাতা করে কিনে নিচ্ছেন। এ জন্য কোম্পানিগুলোও তাদের এ ওষুধ দিতে পারছে না।

ফার্মেসির মালিকরা জানান, প্যারাসিটামলের মধ্যে নাপা, এইচ প্লাস, অ্যাক্সট্রা, অ্যাক্সটেন্ডেড, ফাস্ট, টামেন, রেনোভা নামের বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ রয়েছে। অথচ মানুষ নাপার প্রতি ঝুঁকছেন বেশি। তারা নাপা ছাড়া অন্য ওষুধ নিতে চাচ্ছেন না। নাপা ছাড়াও এই গ্রুপের অন্যান্য ওষুধ রয়েছে। সেগুলো কেউ নিতে চায় না।

দাশুড়িয়া বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, তার ছেলের হঠাৎ করে জ্বর এসেছে। নাপা বা নাপা এক্সটা ট্যাবলেট কেনার জন্য দাশুড়িয়া বাজারের ফার্মেসি ঘুরে কোথাও নাপা বা নাপা এক্সটা, নাপা এক্সটেন্ড ট্যাবলেট পাননি। পরে একটি ফার্মেসির পরামর্শে অন্য কোম্পানীর ওষুধ কিনতে বাধ্য হয়েছেন।

আতাইকুলা বাজারের খান মেডিকেলের সামনে ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা জিয়া ইসলাম বলেন, দুই দিন ধরে বাবা ও ছোট বোনের ছেলের জ্বর ঠান্ডা হয়েছে। ওষুধের দোকানে এসে নাপা এক্সট্রা কিনতে চাইলে তারা জানিয়ে দেন নাপা নামের কোনো ওষুধ নেই। বাধ্য হয়েই পাবনা শহরের দিকে রওনা দিয়েছি। তাও সেখানে পাব কি না বলতে পারছি না।

দুবলিয়া বাজারের মৈত্র মেডিকেলের স্বত্বাধিকারী মতিলাল বলেন, নাপার সংকট রয়েছে। কোম্পানি থেকেই নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা অ্যাক্সটেন্ড ও সিরাপ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে কী কারণে তারা ওষুধ দিচ্ছে না, জানা নেই।

বাংলাদেশ কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি পাবনা জেলা শাখার সভাপতি এফ এম হুমায়ুন কবির খোকন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে নাপার সংকটের মূল কারণ হলো কোম্পানিগুলো চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। মোট চাহিদার ৫০ শতাংশও দিতে পারছে না। ওষুধ তৈরির কোম্পানিগুলো ঠিকমতো এই ওষুধগুলো সরবরাহ করছে না। সেই ক্ষেত্রে আমরা সমিতির পক্ষ থেকে নাপা গ্রুপের অন্যান্য ওষুধ সরবরাহ করতে উদ্বুদ্ধ করছি।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক কে এম আবু জাফর ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে একটি প্রথা চালু রয়েছে, জ্বর হলেই নাপা খেতে হয়। আসলেই এমন ধারণা ভুল। নাপা ছাড়াও অনেক ওষুধ রয়েছে, যেগুলো নাপার চেয়ে মানুষের শরীরে ভালো কাজ করে। নাপার বিকল্প অন্যান্য ওষুধ খাওয়ার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা, জ্বর হলে শুধু নাপাই খেতে হবে। কিন্তু অন্য কোম্পানিগুলোরও যে বিভিন্ন নামে প্যারাসিটামল ওষুধ আছে, সে সম্পর্কে তাদের ধারণা কম। জ্বর হলে চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে তার মানে শুধু নাপা খেতে হবে, তা নয়, ভালো মানের অন্য কোম্পানির প্যারাসিটামল খেলেই হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

রাকিব হাসনাত/এনএ