দীর্ঘদিন ধরে একজনের জায়গায় বসবাস করার পর একদিন মালিক জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন। সেখান থেকে এবার ঠাঁই হয়েছে আরেকজনের জায়গায়

কয়েকটি বাঁশের খুঁটির ওপর পুরোনো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো একটি ঝুপড়ি ঘর। এখানেই অতিকষ্টে দিন কাটছে বৃদ্ধ দম্পতি সিরাজ মিয়া (৭০) ও তার মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের (৬৫)। তাদের নিজেদের কোনো জমিজমা নেই। দীর্ঘদিন ধরে একজনের জায়গায় বসবাস করার পর একদিন মালিক জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন। সেখান থেকে এবার ঠাঁই হয়েছে আরেকজনের জায়গায়। এলাকার মানুষের কাছে হাত পেতে চলে তাদের সংসার।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী কুল্লাগড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা আড়াপাড়া গ্রামের অসমতল ভূমিতে বসবাস এই অসহায় বৃদ্ধ ও নিঃসন্তান দম্পতির।

সিরাজ মিয়া তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের জমি নাই। ঘরও নাই। এর আগে একজনের জায়গায় ছিলাম। মালিক ছেড়ে দিতে বলেছেন। তাই এবার এখানে এসেছি। এরপর কোথায় যাব জানি না। এখানে একটা ভাঙাচোরা ঘরে কোনো রকমে বেঁচে আছি। বৃষ্টি হলে পানি ঢোকে এবং পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সব সময় জীবজন্তুর ভয়ে থাকি। রাতে ভালো করে ঘুমাতেও পারি না।

তিনি বলেন, আমার শরীরে শক্তি নেই। তাই এখন আর কামাই-রোজগার করতে পারি না। আমাদের কোনো সন্তান নেই। মানুষের কাছে হাত পেতে চলি। এ ছাড়া বউয়েরও মাথায় অসুখ (মানসিক ভারসাম্যহীন)। জীবনের শেষ সময়ে এত দুঃখ-কষ্ট আর সহ্য হয় না। এখন আমাদের একমাত্র ভরসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের একটু দয়া করলে মরার আগে একটু শান্তিতে মরতে পারতাম।

স্থানীয় বাসিন্দা হিরণ মিয়া বলেন, সত্যিই পরিবারটি চরম অসহায়। মানুষের সাহায্যে কোনো রকম বেঁচে আছে। তাদের সরকারিভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাচ্ছি।

এদিকে গৃহ ও ভূমিহীন হয়েও বৃদ্ধ এই দম্পতির ঝুপরি ঘর, মানবেতর জীবনযাপনের কিছুই যেন চোখে পড়ছে না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

এ বিষয়ে স্থানীয় কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সুব্রত সাংমা জানান, অসহায় সিরাজ-ফাতেমা দম্পতি বৃদ্ধ বয়সে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, এটা সত্য। আমিও চেষ্টা করছি যাতে এই পরিবারটি সরকারি ঘর ও ভূমি পায়। 

এত দিনেও কেন এই অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি তালিকাভুক্ত হননি, এমেন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বছর আমার ইউনিয়নে মাত্র ৭টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমি আরও ১০টি ঘরের চাহিদা দিয়েছি। নতুন বরাদ্দ এলেই বৃদ্ধ সিরাজ মিয়াকে সরকারি জমি ও ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব উল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসহায় এ বৃদ্ধ পরিবারটিকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বিশেষ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধ দম্পতির জন্য সরকারি ঘর ও ভূমি প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মো. জিয়াউর রহমান/এনএ