রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল (সদর) হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগী ও স্বজনরা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো হাসপাতাল দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

বিনা অনুমতিতে হাত থেকে টেনে নিয়ে রোগীদের ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপত্রে ছবি তুলছেন। আবার গিয়ে ভিড় করছেন চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বারবার নির্দেশনা দিলেও শোনেন না তারা। হাসপাতালে কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য দিন ও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা মানছেন না তারা। তবে কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা।

বুধবার (৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন তলায় ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালজুড়ে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। রোগী চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হওয়ামাত্রই কয়েকজন মিলে করোনার এই ভয়াবহ সময়েও ঘিরে ধরেন তাকে। শুরু করেন ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা।

হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনার জন্য বানানো কক্ষটি দখলে নিয়ে রেখেছেন তারা। এখানেই রাখেন তাদের ব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। এমনকি সুযোগ পেলেই ঢুকে পড়ছেন চিকিৎসকদের রুমে। ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলায় একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে রোগীদের গোপনীয়তা, তেমনি অন্যদিকে হয়রানি যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্য সঙ্গী।

তবে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে কেটে পড়েন অধিকাংশ প্রতিনিধি। বক্তব্য নিতে চাইলে এক প্রতিনিধি এমন কিছু করেননি বলে সাফ জানিয়ে দেন, উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু এই প্রতিবেদকের কাছে প্রমাণ আছে বললে তিনিও আর কোনো কথা না বলে সটকে পড়েন। অন্যরা অবস্থান করলেও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

শহরের পৌরসভার মাসিমপুর এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে মো. মোখলেসুর রহমান নামের একজন রোগী এসেছিলেন তার ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য চিকিৎসক দেখাতে। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হতেই কয়েকজন প্রতিনিধি এসেই তোলেন তার ব্যবস্থাপত্রের ছবি।

চর্মরোগের সমস্যার জন্য চিকিৎসক দেখাতে আসা মজিবুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বিরক্ত। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাজটা ঠিক হচ্ছে না। তবে এসব হলেও আমাদের কী করার আছে বলেন? হাসপাতালের ডাক্তার ও পরিচালকদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠন ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ এসোসিয়েশনের (ফারিয়া) সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, যারা সদর হাসপাতাল ভিজিট করেন, আমি তাদের সবাইকে একাধিকবার এ বিষয়ে জানিয়েছি এবং এমনকি সভা ডেকে তাদের সবাইকে ভিজিটিং ডে ও সময় ছাড়া ভিজিট না করতে বলেছি। কিন্তু তারা শোনেননি।

তিনি আরও বলেন, আমি আমাদের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজারদের যে সংগঠন আছে (এক্সিকিউটিভ ফোরাম), তাদেরও বিষয়টি জানিয়েছি। তিন মাস এটা বন্ধ থাকলেও এখন আবার আগের মতো শুরু হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ এক্সিকিটিভ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা ও ভিজিটিংয়ের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ভিজিট করতে আমরা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করেছি। তবে কেউ যদি তেমন কিছু করে থাকে, সেই দায়ভার সংগঠন বা কোম্পানি নেবে না। এটার দায়ভার তাকে ব্যক্তিগতভাবে নিতে হবে।

তবে এসব বিষয় নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. ফরিদুল ইসলাম।

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোববার ও বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর থেকে তাদের ভিজিট করার কথা। কিন্তু এই সময়ের বাইরে তাদের ভিজিট করার কথা না। এর আগে আমরা তাদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে এ বিষয়ে একাধিকবার জানিয়েছি।

এ ছাড়া তারা অনেক সময় জোর করে ঢুকে পড়েন। প্রতিনিধিদের উন্মুক্ত সরব উপস্থিতির পরও এ বিষয়ে হাসপাতালের কোনো গাফিলতি নেই বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা। তবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

শুভ কুমার ঘোষ/এনএ