করোনা প্রতিরোধে কাজ করছেন ৩ শতাধিক তরুণ
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাগেরহাটের একঝাঁক তরুণ। দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম থেকেই সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি ও জনসচেতনতা তৈরির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে স্বেচ্ছায় কাজ করে চলেছেন এই স্বেচ্ছাসেবকরা। করোনাযুদ্ধে উপজেলার আনাচে-কানাচে বিরামহীনভাবে ভোর হতে রাত পর্যন্ত ছুটে চলছেন মানুষের সেবায়।
সারাদেশের মানুষ যখন করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে ব্যস্ত, ঠিক তখন-ই স্থানীয় বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় ও নিজস্ব উদ্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাগেরহাট সদর উপজেলা ও ফকিরহাটের ৩ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে হঠাৎ চোখে পড়বে একদল তরুণ-তরুণী কাঁধে স্প্রে মেশিন নিয়ে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করছেন। রাস্তা-ঘাট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, মন্দির, বাজার বিভিন্ন স্থানে তারা জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন। ঘুরে ঘুরে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে। কখনো আবার অসহায় মানুষকে দিচ্ছেন খাদ্যসহায়তা। মাস্ক, স্যানিটাইজার, লিফলেট বিতরণ করছেন। কোভিডের টিকা নেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে করে দিচ্ছেন রেজিস্ট্রেশন। প্রয়োজনে করছেন রক্তদান।
১২টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এই যুব সদস্যরা বাগেরহাট সদর ও ফকিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যে বাগেরহাট সদর ও ফকিরহাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২৪টি হ্যান্ডওয়াশিং পয়েন্ট স্থাপন, ১২টি স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে দুই উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করেছেন তারা। খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কর্মহীন সহস্রাধিক পরিবারের মাঝে।
সদর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক মো. আলিমুজ্জামান ও সামিয়া আক্তার রুপা বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সচেতন করা। এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। বিভিন্ন স্থানে ২৪টি হ্যান্ডওয়াশিং পয়েন্ট স্থাপন করেছি। বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থা, একশন এইড বাংলাদেশ এবং নিজেদের উদ্যেগে এই সব কাজ করে থাকি।
ফকিরহাটের সাদিয়া আক্তার ও খান সোলাইমান বলেন, যেকোনো দুর্যোগেই আমরা কাজ করে থাকি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, আইলা, আম্পানের সময় মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া, রাতে খাবার বিতরণ, ঝড়ের পর উদ্ধার কাজ করা। গাছপালা কেটে সড়ক পরিষ্কারের কাজ করেছি। মানুষের জন্য কাজ করার মধ্যেই আমরা প্রকৃত জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছি।
স্বেচ্ছাসেবক তাহমিনা তুলি ও মারজানা খাতুন বলেন, এই মহামারির মধ্যে মানুষের জন্য কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত। অসহায় মানুষকে খাদ্যসহায়তা, কোভিড ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশনের জন্য গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ভয় ও ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করছি। তার পরও আনন্দ পেয়েছি।
সদর উপজেলায় কাজ করা আবু তালেব, হিমু, স্বদেশ, সাঈদ, ইমরানসহ আরও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
লকডাউনে খাদ্যসহায়তা পাওয়া অসহায় জোবেদা বেগম, দিনমজুর আদিল সর্দার, রিকশাচালক বাবুল শেখ জানান, লকডাউনের মধ্যে খুব-ই সমস্যায় ছিলাম। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম। এই সময় কয়েকজন ছেলে-মেয়ে (স্বেচ্ছাসেবক) এসে চাল, ডাল, তেল ও অন্যান্যে প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে গেছে। কয়েকদিন এখন খেয়ে বাঁচতে পারব।
বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এএসএম মনজুরুল হাসান মিলন বলেন, আমি স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি ও ধন্যবাদ জানাই। কারণ স্বেচ্ছাসেবকরাই সমাজ তথা জাতির মেরুদণ্ড। স্বেচ্ছাসেবকদের পরিশ্রম ও সহযোগিতা ছাড়া কোনো কার্যকর অর্জন সম্ভব নয়। আমরা একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নের সেই সমাজ গড়তে আমাদের সংগঠনের যদি সামান্যতম ভূমিকাও থাকে তবেই আমরা সার্থক।
ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের এ সংকটকালীন মুহূর্তে আমাদের তরুণরা এগিয়ে এসেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষকে সাহায্য করছে। এটি অবশ্যই প্রসংশনীয় কাজ।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, মহামারি পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবকরা যে মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছে তাদের এ কর্মকাণ্ডকে আমি সাধুবাদ জানাই। স্বেছাসেবকরা বিভিন্ন প্রয়োজনে আমার সঙ্গে দেখা করে। তাদের স্বপ্ন ও প্রয়োজনের কথা বলে। আমিও তাদের ভালোকাজের সহযোগী হওয়ার চেষ্টা করি।
এমএসআর