স্ত্রী নাছরিন আক্তার ও কন্যাসন্তানের সঙ্গে রুবেল দেওয়ান

করোনা পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে অক্সিজেনের আকাল। আর এমন সময় অভিনব উদ্যোগে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন মো. রুবেল দেওয়ান নামের এক ব্যক্তি। স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে তিনি কিনলেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। এখন করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগীর পরিবার ফোন করলেই সেই অক্সিজেন রোগীর বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।

বলছিলাম চাঁদপুর সদর উপজেলার ৮নং বাগাদী ইউনিয়নের ইসলামপুর গাছতলা এলাকার ইদ্রিস দেওয়ানের ছেলে রুবেল দেওয়ানের কথা। তিনি ফরিদগঞ্জ উজেলায় গ্রামীণফোন কোম্পানির ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করছেন। স্ত্রী নাছরিন আক্তার ও কন্যাসন্তানকে নিয়ে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকায় ভাড়া থাকেন।

কিছুদিন ধরে চাঁদপুর করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যেই রুবেলের গ্রামের বাড়ি ইসলামপুর গাছতলা এলাকায় মধ্যবয়স্ক এক নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে মারা যান। এলাকার অনেকেই আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ছোটাছুটি করার বিষয়টি রুবেলের মনকে নাড়া দেয়।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেন। এরপর এলাকার এলাকায় বন্ধুবান্ধব এবং প্রবাসী-স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করেন রুবেল। সবাই তাকে সাধুবাদ জানালেও কেউ অর্থসহায়তা করেনি। পরে স্ত্রীর কাছ থেকে গয়না নিয়ে পরিচিত একজনের কাছে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা বন্ধক রেখে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে তা করোনা রোগীকে পৌঁছে দেন।

রুবেল দেওয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালীন অর্থাভাবে নিজেও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। করোনায় আক্রান্ত রোগীরা শ্বাসকষ্টে মৃত্যুবরণ করছে। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে, যা আমার হৃদয়ে আঘাত করে। এরপরই মানুষের কষ্ট লাঘবে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার উদ্যোগ নিই। সবার সাথে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কাউকে পাশে পাইনি। পরে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে নিয়ে আসি।

আমি অনেক আনন্দিত, কারণ আমার স্ত্রী ও আমার পরিবার পাশে রয়েছে। গয়না বন্ধক দেওয়ার সময় আমার স্ত্রী কোনো বাধা দেননি। এখন আমার পাশে এলাকার সবাই এগিয়ে এসেছেন।

অক্সিজেন ব্যবহারের নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি। ইতোমধ্যে শ্বাসকষ্ট রোগীদের বাড়ি গিয়ে সেবা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। আমার এলাকা থেকে হাসপাতাল অনেক দূরে। তাই আমার মতো আরও কেউ যদি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রোগীদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে কোনো রোগী আর শ্বাসকষ্টে মৃত্যুবরণ করবে না। তিনি সব বিত্তশালীকে এই করুণ সময়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

রুবেল দেওয়ানের স্ত্রী নাছরিন আক্তার বলেন, গয়না বন্ধক রেখে যে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনবে, তা আমি জানতাম না। আমাকে বলেছে গয়না বন্ধক রেখে কিছু কেনাকাটা করবে। পরে জানতে পারলাম সে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনেছে। এটা শুনে আমি অনেক খুশি হয়েছি। কারন এর মাধ্যমে মানুষ সেবা পাবে।

বাগাদী ইউনিয়নের ইসলামপুর গাছতলা এলাকার বাসিন্দ ওমর ফারুক ও কাউসার দেওয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। এর মধ্যে চলছে অক্সিজেনের সংকট। অক্সিজেনের কষ্টে অনেকেই আত্মহত্যাও করতে চাচ্ছে। এসব কথা চিন্তা করে রুবেল এই এলাকার জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছেন।

তারা আরও বলেন, তিনি একটি ছোটখাটো চাকরি করেন। নিজেও আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন কিন্তু সবকিছু পেছনে ফেলে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা রুবেলের পাশে সব সময় থাকব।

শরীফুল ইসলাম/এনএ