সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সরাইদহে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সৌন্দর্যঘেরা বটগাছটি চার বিঘা জমির ওপর প্রায় ৪০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। শীতল ছায়া, পাখির কলকাকলি, সবুজ-শ্যামল এ স্থানটিতে বসলে মনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তবে পথচারী ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করা প্রাকৃতিক এ বটবৃক্ষটি আজ হারাতে বসেছে তার জৌলুস।

বটগাছটি ধীরে ধীরে তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে ডাল। এতে আর বেড়ে উঠতে পারছে না গাছটি। ফলে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছের সৌন্দর্য। তবু এলাকার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এটি।

বটতলায় প্রতিবছর চৈত্র মাসে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় হিন্দু-মুসলিম সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মেলা দেখতে আসেন অনেকেই। তবে আগের সেই জৌলুস হারালেও ৪০০ বছরের স্মৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রেখে রেখেছে বটগাছটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় চার বিঘা জমিতে বিস্তৃ এ বটগাছের ডাল পালা ছড়িয়ে আছে চারদিকে। বিছিয়ে দেওয়া একেকটা ডালপালা ও শাখা-প্রশাখাকে মনে হয় পরম মমতায় বাড়িয়ে দেওয়া ছায়ার শীতল হাত। গাছের নিচে বসলে উঠতে চায় না মন। এ গাছের নিচে বসলে প্রকৃতির মায়ায় পড়ে যায় পথচারীরা। এমনই বলছেন স্থানীয়রা।
 
প্রাকৃতিক এই সুন্দর্যের দেখা মেলে চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সরাইদহ বটভূমিতে। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সৌন্দর্যঘেরা বটগাছটি চার বিঘা জমির ওপর প্রায় ৪০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। তবে কেউই বলতে পারেনি গাছটির সঠিক বয়স। গাছের শাখা-প্রশাখা ও ডালপালা মাটির সঙ্গে মিছে যেন তৈরি করেছে এক আত্মিক সম্পর্ক।


 
এলাকার প্রবীণদের মতে, বহু পুরোনো বটতলাটি একসময় সাধু, সন্ন্যাসী ও ঋষিদের ধ্যানধারণার জায়গা ছিল। এখানে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা হতো একসময়। বর্তমানে এখানে আর সাধু-সন্ন্যাসীদের দেখা না গেলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীতে ভরপুর থাকে। বটতলায় চৈত্র মাসে চড়পাড়া মেলা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু-মুসলিম সবাই অংশ নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মেলা দেখতে আসেন অনেকেই।

বটতলার দোকানি আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারি ছুটির দিনে এখানে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। ঈদ অথবা অন্যান্য উৎসবে এখানে অসংখ্য দর্শক হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেড়াতে আসে। বিশেষ করে চৈত্র মাসে গাছের নিচে বসা মেলা উপজেলার মধ্যে বিখ্যাত। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এ মেলায় আসে সব পেশার ও ধর্মের মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা আশি-ঊর্ধ্ব সোহরাব আলী ও হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমি জন্মের পর থেকে দেখেছি গাছটি এমনই। এর সঠিক বয়স কেউ বলতে পারে না। তারা আরও বলেন, এ এলাকার সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি বিশু হাজি ১২০ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে বলেছেন, তার বাবাও নাকি বটগাছটি এমনই দেখেছেন। আমরাও জন্মের পর থেকে এমনই দেখতেছি। গাছের সঠিক বয়স আমরা জানি না। তবে সবারই ধারণা, গাছটির বয়স ৪০০ বছরের মতো।
 
চান্দাইকোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, গাছটি অনেক পুরোনো। গাছের সঠিক বয়স কারোরই জানা নেই। বাবা-দাদাদের মুখে গাছের অনেক গল্প শুনেছি। তবে বটগাছটি আমাদের এলাকার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

শুভ কুমার ঘোষ/এনএ