সাভারের আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় ৫১ জন শ্রমিকের ছবি প্রকাশ করে ছাঁটাই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নোটিশে উল্লিখিত সব শ্রমিককে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৭ আগস্ট) সকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ডিকে নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার সামনের দেয়ালে শ্রমিকদের ছবি-সংবলিত নোটিশ দেখতে পাওয়া যায়। যা সবাই মুঠোফোনে ধারণ করে। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, শ্রম আইন, শ্রমবিধি বহির্ভূতভাবে সংঘবদ্ধ অযৌক্তিক ধর্মঘট, কর্তৃপক্ষের যৌক্তিক আদেশ অমান্য করে কাজে বিরতি, কাজ বন্ধ, কারখানায় উশৃঙ্খলতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি ও কারখানার ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি সাধন করার কারণে বাংলাদেশ শ্রম আইন (ধারার উল্লেখ নাই) মোতাবেক নিম্নলিখিত (ছবি-সংবলিত) শ্রমিকদের তদন্তকালীন অপসারণ করা হলো। অপসারণকৃত শ্রমিকদের অপসারণের নোটিশ ডাকযোগে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় প্রেরণ করা হবে।

এ বিষয়ে শ্রমিকরা জানান, গত ৩ আগস্ট কারখানায় কাজ নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তা সোহেলের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে কারখানার ভেতরে অবস্থান করতে থাকেন। পরে শ্রমিকরা বাসায় চলে গেলে পরদিনই শ্রম আইন ১৩ (ক) ধারায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শনিবার কারখানার গেটের সামনে ৫১ জনের ছবি দিয়ে অপসারনের নোটিশ প্রদান করে কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিকনেতা জানান, কারখানায় রীতিমতো গ্রপিং চলে। এই গ্রুপিংয়ের কারণে শ্রমিকদের বলি হতে হচ্ছে। কারখানাটির ম্যানেজার ও অ্যাডমিন ম্যানেজার দুজনই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চালাতে চান। কারখানা কর্তৃপক্ষ একটি লাইন ভেঙে অপর একটি লাইন সাজাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানেননি। কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজের সুবিধার্থে লাইন ভেঙে আবার গোছাতে পারবেন। এটা না মানাই শ্রমিকদের অপরাধ?

তিনি জানান, আশুলিয়ার প্রায় সব কারখানা অসন্তোষ দেখা দিলে দুই থেকে তিন দিন দেখার পর শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩ (ক) ধারায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই কারখানা পরদিনই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। আজও কারখানাটি বন্ধ রয়েছে এবং শ্রমিকদের কর্তৃপক্ষ বলেছে যে আজও তোমরা কারখানায় আসবা না।

নোটিশে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে ওহাব নামের এক শ্রমিকের। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজ নিয়ে কারখানার কর্মকর্তা সোহেলের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে শ্রমিকরা কারখানায় শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করে বাসায় চলে যান। কারখানায় কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেনি। সামান্য কথা-কাটাকাটি জেরে ৫১ জন শ্রমিককে অপসারণ করা হয়েছে। আর এটাই ছাঁটাই বলে চালিয়ে দেওয়া হবে।

এ ঘটনায় কারখানাটির ম্যানেজার (প্রশাসন) আল-আমিন লিটুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি এর কোনো জবাব দেননি। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএকিউএম জাহিদের মুঠোফোনে করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মাহিদুল মাহিদ/এনএ