মেয়র প্রার্থী (বাঁ থেকে) লতিফুর রহমান, তাহমিনা পারভীন ও সেতু চৌধুরী

আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন। ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচন সামনে রেখে কনকনে শীত উপেক্ষা করেই চলছে প্রার্থীদের বিরতিহীন প্রচারণা। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও।

এদিকে পৌর এলাকার সর্বত্র ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের ছবি ও প্রতীক সম্বলিত পোস্টার-ব্যানারে। প্রচারণা চলছে মাইকেও। অতীতের সব ভুল-ত্রুটি মার্জনা চেয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র লতিফুর রহমান রতন, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক মেয়র মাহবুবুন্নবী শেখ, স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী তাহমিনা পারভীন বীথি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা চৌধুরী আবু হেনা মোস্তফা কামাল সেতু ওরফে সেতু চৌধুরী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

কিন্তু ঋণখেলাপি প্রমাণ হওয়ায় বাদ পড়েন বিএনপির প্রার্থী মাহবুবুন্নবী শেখ। তবে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বলছেন ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন থেকে বিএনপির প্রার্থীকে বাতিল করা হয়েছে।

বিএনপি নির্বাচন থেকে বাদ পড়লেও বিপদ কাটেনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফুর রহমান রতনের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মোহনগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও আমৃত্যু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত আব্দুল কদ্দুসের কন্যা তাহমিনা পারভীন বীথি (নারিকেল গাছ)।

এ ছাড়া মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক ছাত্রনেতা চৌধুরী আবু হেনা মোস্তফা কামাল সেতু ওরফে সেতু চৌধুরী।

তবে সচেতন ভোটাররা বলছেন, স্বতন্ত্র ওই দুই প্রার্থীর তুলনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী লতিফুর রহমান রতন অনেকটাই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনে ভোট ডাকাতির আশঙ্কাসহ প্রচার-প্রচারণায় বাধা প্রদান ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা পারভীন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।

পৌর শহরের মার্কাস এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ও নওহাল এলাকার বাসিন্দা দীন ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা মোহনগঞ্জ। প্রতিশ্রুতি নয়, যিনি মেয়র হয়ে পৌরসভার নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবেন— আমরা এমন প্রার্থীকেই ভোট দেব।
 
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তাহমিনা পারভীন বীথির বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন আমার কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্নভাবে প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন। নানা রকম হুমকি দিচ্ছেন। এসব ঘটনায় আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।

নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতির আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন। নির্বাচন সুষ্ঠু হলেই আমি বিজয়ী হব।

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিজয়ী হবেন বলে জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী সেতু চৌধুরীও।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী লতিফুর রহমান রতন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। আমি তিনবারের মেয়র। এবারও জনগণ ভালোবেসে আমাকেই বিজয়ী করবে।

রিটানিং কর্মকর্তা ও নেত্রকোনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানান, ৬ দশমিক ৯৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মোহনগঞ্জ পৌরসভা। এ পৌরসভাটির নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ৩৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী আসনে ১৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনে ৯ ওয়ার্ডে মোট ২১ হাজার ৪০৪ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভোট গ্রহণের প্রায় সব প্রস্তুতিই সম্পন্নের পথে। ভোট গ্রহণের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।

এমএসআর