চিকিৎসক বলেছেন, এখনই চিকিৎসা না করলে শরীর অচল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে

একে তো বাকপ্রতিবন্ধী। আবার ২০০৮ সালে একদিন কৃষিকাজে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাঁ পা থেঁতলে যায়। দুর্ঘটনার পর বাড়িতে অচল হয়ে পড়ে ছিল বছরখানেক ধরে। এরই মধ্যে চিকিৎসার কাজে তার জমানো টাকা খরচ হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসক দেখিয়েও কোনো লাভ হয়নি। অচল পা নিয়ে কাজ করতে না পারায় সংসারে দেখা দেয় অভাব-অনটন।

এদিকে স্বামীর অক্ষমতা দেখে স্ত্রী জোসনা রানীও মানুষের বাড়িতে শুরু করেন গৃহকর্মীর কাজ। চিকিৎসক বলেছেন, এখনই চিকিৎসা না করলে শরীর অচল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা খরচ জোগাতে আরও কত দিন কাজ করতে হবে, জানেন না তিনি।

দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গোয়াইল ডারা গ্রামের ছতিশ মাস্টারপাড়ার মৃত হরপতি রায়ের ছেলে রবীন্দ্র রায় (৫০) জন্ম থেকেই বাকপ্রতিবন্ধী। অচল একটি পা কেটে যিনি বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে বাঁচতে চান।

শুক্রবার (৬ আগস্ট) সরজমিনে দেখা যায়, বাড়ির সামনে বাঁশের একটি মাচায় বসে আছেন রবীন্দ্র রায়। সেখানে কথা হয় তার সহোদর বড় ভাই মলিন রায়ের সঙ্গে।

মলিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই বাকপ্রতিবন্ধী হলেও ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলায় এলাকায় তার অনেক নামডাক ছিল। ১০ বছর বয়স থেকেই সে কৃষিকাজ করত। মানুষের বাড়িতে কাজ করে ভালোই দিন যাচ্ছিল তার। ১৯৯৮ সালে রবীন্দ্র রায় বিয়ে করে। পরে তার দুটি ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে দুই ছেলেই মারা যায়।

২০০৮ সালে একদিন কৃষিকাজে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাম পা থেঁতলে যায়। অনেক চিকিৎসা করেও কোনো উপকার হয়নি। দুই বছর আগে তার স্ত্রীও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। বেঁচে থাকার তাগিদে রবীন্দ্র অচল পা নিয়ে শুরু করে ভিক্ষাবৃত্তি। বর্তমানে সেটাও মুশকিল হয়ে গেছে। ডাক্তার পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। পা না কাটলে ধীরে ধীরে পুরো শরীর অচল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। টাকার অভাবে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে রবীন্দ্র।

প্রতিবেশী নিরেন রায় বলেন, আগে কৃষিকাজ করেই ভালোই দিন যাচ্ছিল রবীন্দ্র রায়ের। আর্থিক অবস্থা ভালোই ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তাকে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। বাকপ্রতিবন্ধী হয়েও আবার পা টাকে হারিয়েছে রবীন্দ্র।

রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আনিছুর রহমান ডলার ঢাকা পোস্টকে বলেন, রবীন্দ্র রায়ের পায়ের যে অবস্থা, তা দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে কেটে ফেলতে হতে পারে। তা না হলে ধীরে ধীরে তার পুরো শরীর অচল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা উন্নত চিকিৎসা করাতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

নশরতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য মোতাহার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কাছে রবীন্দ্র ও তার বড় ভাই আসছিল। আমি তাদের সমাজসেবা অফিসে আবদেন করতে বলেছি। আবেদন করলে আমি সুপারিশ করব।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হামিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বিষয়টা জানি। রবীন্দ্র আমার অফিসে আসছিলেন। আমি দিনাজপুর মেডিকেলে সমাজসেবা অফিস থেকে অল্প টাকায় অপারেশন করিয়ে দিতে সহযোগিতা করব।

এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হৃদয়বান মানুষের কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন রবীন্দ্র রায়ের বড় ভাই মলিন রায়। কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে রবীন্দ্র রায়ের বড় ভাই মলিন রায়ের ০১৭২৩১৯২৫৭৪ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

এনএ