ঈদের ছুটি শেষে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে নেত্রকোনায় ফিরছিলেন তারা। পথে নাটোরের গুরুদাসপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীসহ একই এলাকার তিনজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছে ওই দম্পতির দুই বছরের মেয়ে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়েছে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। 

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামে রোববার (০৮ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে নিহতদের মরদেহ পৌঁছায়। মরদেহগুলো পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় পিএসএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়।

এর আগে, রোববার দুপুরে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা টোলপ্লাজার পাশে পিকআপ ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ে ছয়জন নিহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনই দৌলতপুর উপজেলার একই এলাকার বাসিন্দা।

নিহতরা হলেন- পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের মৃত শামসের মোল্লার ছেলে আফফান মোল্লা (৫২), নিহত আফফানের স্ত্রী আরিফা খাতুন (২৪) এবং একই গ্রামের মৃত নাহারুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম (২৫)। তারা পাঁচ বছর ধরে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে বসবাস করছেন। সেখানে আফফান ও শহিদুল তিলের খাজা বিক্রি করতেন। 

প্রতিবেশীরা জানান, আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজনের মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। তারপরও শেষবারের মতো দেখতে এসেছি মরদেহগুলো। ঈদে আনন্দ করার জন্য গ্রামে এসেছিল তারা। কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তাদের মৃত্যু হয়েছে। মা-বাবা মারা গেছে। এখন ছোট্ট আকলিমার (০২) দায়িত্ব কে নেবে? তার ভরণপোষণ কে দেবে? 

কুষ্টিয়া-১ আসনের (দৌলতপুর) সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহর ছেলে শাইখ আল জাহান শুভ্র বলেন, একই দিনে স্বামী-স্ত্রীসহ একই পাড়ার তিনজন মারা গেল। এটা আমরা কেউ মানতে পারছি না। পুরো এলাকা আজ নিস্তব্ধ। আমি কয়েকবার নিহতের বাড়িতে গিয়েছি। তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আপাতত দাফন ও অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দেওয়ার জন্য নিহতের পরিবারকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে নিহতদের পরিবারের পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ।

বনপাড়া হাইওয়ে থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বনপাড়া বাইপাস মোড় থেকে ১৫ জন যাত্রী নিয়ে একটি পিকআপ ভ্যান ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা দেড়টার দিকে পিকআপটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গুরুদাসপুরের টোল প্লাজার ৫০০ গজ পশ্চিমে মহাসড়কের বাম পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ছয়জন নিহত হন।

ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক কবিরাজ বলেন, রোববার সকাল ৯টার দিকে তারা ব্যাটারিচালিত ভ্যানে হোসেনাবাদে যান। সেখান থেকে মাইক্রোবাসে যায় ভেড়ামারায়। সেখান থেকে পিকআপ ভ্যানে যান নাটোরের বনপাড়ায়। তারপর আবারও পিকআপ ভ্যানে করে রওনা হয়েছিলেন। পথিমধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। আফফান ও শহিদুল ফেরি করে তিলের খাজা বিক্রি করতেন।

দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

রাজু আহমেদ/এসপি