কম্বল না পেয়ে চোখে পানি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন আটোয়ারীর তোড়িয়া ইউনিয়নের শুকাতি এলাকার কয়েকজন বৃদ্ধা

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দিন দিন বাড়ছে শীতের প্রকোপ। উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা হিমালয়ের হিম বাতাস আর মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারণে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। ফলে হাড় কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও অসহায় শীতার্তরা। 

গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করলেও এতে রক্ষা পাচ্ছেন না শীতের কামড় থেকে। শীতবস্ত্রের জন্য অনেক গরিব বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কারও ভাগ্যে একটি কম্বল জুটলেও অনেকের ভাগ্যে জুটে দুই ফোটা চোখের পানি। 

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে জেলার আটোয়ারী উপজেলায় আটোয়ারী আদর্শ মহিলা কলেজ মাঠে শীতবস্ত্র না পেয়ে ৭ বৃদ্ধাকে অশ্রুভেজা চোখে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। 

জানা যায়, মিশন হিউম্যানিটি নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে শহীদ কামরুজ্জামান ও জাহানারা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ওই এলাকার মানুষের মধ্যে প্রায় ৬৫০ পিস শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা হয়। শীতবস্ত্র বিতরণের কথা শুনে তোড়িয়া ইউনিয়নের  শুকাতি এলাকা থেকে ৭ জন বৃদ্ধা  ছুটে আসেন মাঠে। কিন্তু তাদের নাম না থাকায় তারা মাঠের এক কোণে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে শীতবস্ত্র না পেয়ে বুকভরা কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা। 

জানা যায়, ওই ৭ বৃদ্ধার বাড়ি আটোয়ারীর তোড়িয়া ইউনিয়নের শুকাতি এলাকায়। তারা সবাই দিনমজুর। কেউ মানুষের বাড়িতে কাজ করে আবার কেউ কেউ হোটেলে কাজ করেন।

কম্বল না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন তারা

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে সরকারিভাবে মোট ৩৬০০ শীতবস্ত্র বরাদ্দ আসে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র কেনার জন্য ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে সেই অর্থ দিয়ে আরও ১৯০০ কম্বল কেনে উপজেলা প্রশাসন। ফলে সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বরাদ্দ আসে ৫৫০০। তাছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বা সামাজিক সংগঠনের উদ্যােগে আরও ২ হাজারের মতো শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। সব মিলিয়ে আটোয়ারী উপজেলার প্রায় ৭ হাজার ৫০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে কথা হয় শীতবস্ত্র না পেয়ে হতাশ বাড়ি ফেরা মুসলিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি অশ্রুভেজা চোখে কেঁদে কেঁদে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমরা কাজ করে চলি। বাড়িঘর ভাঙা। শীত নিবারণের জন্য আমাদের কোনো কাপড় নেই। আমাদের কম্বল দিলো না ওরা। আগে যাদের তালিকা হয়েছে তাদের কম্বল দেয়া হলো। আমরা কি তাহলে গরীবের তালিকায় পড়ি না? 

একই কথা বলেন একই এলাকার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, আমি হোটেলে কাজ করি। আমার ছেলে মেয়ে নেই। কনকনে শীতে কাজ করতে পারি না। গরম কাপড় না থাকায় আমি বিভিন্ন রোগে ভুগতেছি। কিন্তু তারা একটা কম্বল দিলো না। ভালো ভালো মানুষ কম্বল নিয়ে গেল অথচ আমরা চাইলাম আমাদের দিলো না। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে যে এলাকায় শীতবস্ত্র দেওয়া হয় সে এলাকায় দুই/একজনকে তালিকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তারা বিভিন্ন এলাকার পরিচিত গরীব মানুষদের তালিকা করে হাতে একটা টোকেন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে আসতে বলেন। সেখানে দীর্ঘ অপেক্ষার পর শীতবস্ত্র হিসেবে একজন করে শীত নিবারণের জন্য কম্বল পায়। তবে তালিকার বিষয়ে কিছু বঞ্চিত শীতার্তরা বলছেন, যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা তাদের পরিচিত লোকদের কম্বল দেন।  

আটোয়ারী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, বুধবার আটোয়ারী আদর্শ মহিলা কলেজ মাঠে একটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যাগে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তারা তাদের মতো তালিকা করে বিতরণ করেছে। কে পেয়েছে আর কে পায়নি সে বিষয়ে আমি তেমন জানি না। তবে যারা শীতবস্ত্র পায়নি এখনও আমরা তাদের শীতবস্ত্র দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করতেছি। 

এসপি