পদ্মা নদীর নাব্যতা সংকটে গোপালপুর-মৈনট নৌপথে নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হয়

পদ্মা নদীর নাব্যতা সংকটে গোপালপুর-মৈনট নৌপথে নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা সংকট কাটিয়ে পুনরায় নৌযান চলাচল স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। 

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদরে অবস্থিত গোপালপুর ঘাট। অপর পাড়ে দোহার উপজেলার কার্তিকপুর এলাকায় অবস্থিত মৈনট ঘাট। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী চলাচল করে এই নৌপথে।

চরভদ্রাসনের গোপালপুর ঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার পানি শুকিয়ে এক মাস ধরে বালুর স্তূপ পড়ে রয়েছে। এতে নৌযান চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটছে। যদিও ঘাট ইজারাদার পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাটে ও অপর পাড়ের চর মৈনট পয়েন্টে দুটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী খননের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু নদীতে জোয়ার-ভাটার কারণে প্রায়ই যাত্রীবাহী ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। 

ঘাটের ইজারাদার বাবুল শিকদার বলেন, গত বছর ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস থেকে গোপালপুর-মৈনট ঘাটটি ছয় কোটি ২৫ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছি। এর মধ্যে ঘাটের মূল ডাক পাঁচ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার টাকা। ভ্যাট ৭৮ লাখ ২২ হাজার ৬৫০ টাকা ও ২৬ লাখ ৫৫০ টাকা আয়করসহ মোট ছয় কোটি ২৫ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা ঘাটের ইজারা মূল্য দিতে হয়। 

তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে ঘাট ইজারা নেওয়ার পর করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দীর্ঘ সময় সরকার এই নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখে। এখন আবার পদ্মার পাড় শুকিয়ে এক কিলোমিটার এলাকায় বালুচর পড়েছে। ঘাটে আগের চেয়ে এখন যাত্রীও অনেক কমে গেছে। 

বাবুল শিকদার বলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে ঘাট বরাবর পদ্মার মাঝে ড্রেজিং করা হয়। ড্রেজিংয়ের ফলে গোপালপুর ঘাটের পদ্মা পাড়ে আরও বেশি পরিমাণ বালুচর পড়েছে। ঘাটটি চালু রাখার জন্য নিজেদের খরচে পদ্মা নদীর দুই পাড়ে দুটি ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন ১২ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত খরচ করে চলেছি। কিন্তু জোয়ার ভাটার কারণে তাতেও বিঘ্ন ঘটছে। ঘাটটি ইজারা নিয়ে এ বছর বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। ঘাটটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় স্বাভাবিক করার দাবি জানাই। 

উপজেলার গোপালপুর ঘাট ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা সদরের গোপালপুর ঘাট থেকে পূর্বদিকে প্রায় এক কিলোমিটার পদ্মা নদীর বুকজুড়ে বালু মাটির উঁচু স্তূপ পড়ে রয়েছে। বালুচরের পদ্মা পাড় পয়েন্টে ঘাট ইজারাদাররা নিজস্ব অর্থায়নে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে খননের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পদ্মার নদীর জোয়ার ভাটার কারণে যাত্রী পারাপারে ট্রলার ও স্পিডবোটগুলো চলাচল করতে পারছে না। এক কিলোমিটার হেঁটে যাত্রীদের ট্রলার ও স্পিডবোটে উঠতে হয়। সঙ্গে থাকা মালামাল ও শিশুদের নিয়ে দুর্গম বালুচরের মধ্যে হেঁটে যেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। 

ঢাকা থেকে ফেরা যাত্রী রাশেদ খান বলেন, স্পিডবোটের ভাড়া ১৭০ টাকা ঠিকই দিলাম। কিন্তু ২০ মিনিট সময়ের পদ্মা পার হতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লেগে গেছে। এরপরও প্রায় এক কিলোমিটার বালুচর হেঁটে আসতে হয়েছে। 

ঢাকাগামী কল্পনা আক্তার বলেন, প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে ট্রলারে উঠেছি। সঙ্গে দুই বছরের শিশু ও ব্যাগ আছে। চর জেগে যাওয়ায় ট্রলার অনেক ঘুরে যায়। এজন্য সময় বেশি লাগে। এই রুট দিয়ে যাতায়াতে ভোগান্তির শেষ নেই। 

চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোতালেব মোল্যা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার গোপালপুর-মৈনট নৌরুট দিয়ে আশপাশের নগরকান্দা, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলাসহ এই এলাকার হাজারো যাত্রী প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন। যাত্রীরা স্পিডবোটে ২০ মিনিটে পদ্মা নদী পার হতে পারেন। 

তিনি আরও বলেন, অপর পাড় দোহার উপজেলার কার্তিকপুর এলাকা থেকে যাত্রীরা এক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা পৌঁছতে পারেন। তাই এই অঞ্চলের ঢাকাগামী বেশিরভাগ যাত্রী গোপালপুর-মৈনট ঘাট দিয়ে পদ্মা নদী পার হন।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, নাব্যতা সংকটের কারণে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে স্পিডবোটে উঠতে হয়। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে সরকারিভাবে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন সুলতানা বলেন, গোপালপুর-মৈনট নৌরুটের ইজারা বিভাগীয় কমিশনার অফিস থেকে দেওয়া হয়। ইজারা দেওয়ার সময় চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে নাব্যতা সংকট হলে ড্রেজিং ইজারাদারকে করতে হবে। তারপরও বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাব। যাতে দ্রুত সমাধান হয়।

এএম