পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইট পোড়াচ্ছে অনেক ভাটা

সরকারি অনুমোদন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফরিদপুরে গড়ে উঠছে একের পর এক ইটভাটা। জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় চলছে এসব ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ। 

জেলার সদরপুরের পেয়াজখালিতে অনুমোদন ছাড়াই ইটভাটা স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছেন। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর জেলায় ১১৯ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ ইটভাটা ২৫টি। যার মধ্যে চলতি বছরে নবায়ন করা হয়নি ১৪টি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই ১১টির। অথচ অবৈধভাবে ইট পোড়াচ্ছে এসব ইটভাটা।

জেলা সদরের মেসার্স এ ফি আই ব্রিকস, মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্স ব্রিকস, মেসার্স লুৎফুন্নেসা ব্রিকস, মধুখালী উপজেলার মেসার্স এ আর ব্রিকস, মেসার্স এম আর ব্রিকস, কে এম জেড আর ব্রিকস, বোয়ালমারী উপজেলার মেসার্স কে বি ব্রিকস ও আহসান কবির হেলাল ব্রিকস, চরভদ্রাসন উপজেলার মেসার্স ফরহাদ হোসেন ব্রিকস এবং ভাঙ্গা উপজেলার মেসার্স হাওলাদার ব্রিকসের পরিবেশ অধিপ্তরের ছাড়পত্র নেই।

সদরপুর উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেসার্স ফকির ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ২৭ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট ভাটা মালিককে তাদের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এলাকাবাসী জানায়, ফসলি জমি পাঁচ বছরের জন্য বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে ইটভাটা করা হয়। যাদের মূল লক্ষ্য নদীর বালু ও মাটি অবৈধভাবে উত্তোলন করা। এতে সরকারের শুধু রাজস্বই হারাবে না বরং ইট পোড়ানো ও হরদম বালুর ট্রাক চলাচলের জন্য সেখানে জনসবতিও হুমকির সম্মুখীন হবে। এ ব্যাপারে তারা জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছে। সম্প্রতি এলাকাবাসী ইটভাটা স্থাপনের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।

এ ব্যাপারে মেসার্স ফকির ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী এখলাস আলী ফকির বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য আমরা আবেদন করেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি কাগজ আমরা পেয়েছি।

ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এইচ এম রাসেদ বলেন, এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সদরপুরের মেসার্স ফকির ব্রিকসের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও যেসব ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া ইট পোড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। 

ফরিদপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রউফ মিয়া বলেন, আয়কর ও ভ্যাট দিয়ে সরকারের বিধিবিধান মেনে আমাদের বৈধ উপায়ে ইটভাটার কার্যক্রম চালাতে হয়। এজন্য প্রতি ইটভাটাকে বছরে বিপুল পরিমাণ খরচ দিতে হয়। যারা এসব নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে ভাটা চালাচ্ছেন তাদের এই টাকা খরচ হয় না। এতে আমরা যারা বৈধ ভাটার মালিক তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এজন্য অবৈধ ও অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিপক রায় বলেন, যেসব ইটভাটা মালিকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক পেয়েছি তাদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যাদের কাগজপত্র যথাযথ নেই তাদের ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নোটিশ দেওয়া হবে। নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএম