দুই জাতের তরমুজ রোপণ করে সফলতার মুখ দেখছেন শাহিন

করোনা রোধে বন্ধ আছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন বাসায় অবসর ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী শাহিন আলম। একসময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটলেও, করোনাকালীন তাতে ছেদ পড়ে। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল হকের দিকনির্দেশনায় মাচায় তরমুজ আবাদ করে সাফল্যের দেখা পান শাহিন।

সরেজমিনে ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়নের কামারপুকুর গ্রামে শাহিন আলমের (২২) বাসায় তার সাফল্যের বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। তার বাবার নাম হাবিবুর রহমান। শাহিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।

শাহিন আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাসায় বেকার বসে ছিলেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল হকের দিকনির্দেশনা নিয়ে চলতি বছরের জুন মাসের দিকে তার চাচাতো ভাইয়ের ২৫ শতাংশ জমি বর্গা নেন। এরপর মাচা তৈরি করে তরমুজের চারা রোপণ করেন।

দুই জাতের তরমুজ রোপণ করেন শাহিন, একটি হলো গোল্ডেন ক্রাউন (ওপরে হলুদ ভেতরে লাল) ও অপরটি ব্ল্যাকবেরি (ওপরে কালো ভেতরে লাল)। এতে খরচ প্রায় ৩৫ হাজারের মতো হয়েছে বলে জানান সেই শিক্ষার্থী। তবে বাজারে ভালো দাম পাবেন, এমনটি আশাবাদী তিনি।

এদিকে অসময়ে তরমুজ চাষে শিক্ষার্থীর সাফল্যের দিকে তাকিয়ে স্থানীয় অনেক চাষিই এই অসময়ে তরমুজ আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় কৃষক জয়নাল বলেন, চোখের সামনে শাহিন তার চাচার জমিতে মাচায় আবাদ করলেন অসময়ের তরমুজ। অল্প দিনে অনেক বড় হয়ে গেল তরমুজগুলো। অসময়ের তরমুজ অনেক ভালো দামে বিক্রি হবে আশা করা যায়। আমারও পর্যাপ্ত জমি আছে। তাই এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করব বলে ভাবতেছি।

ওমর ফারুক নামের আরেক কৃষক বলন, কৃষক পরিবারের ছেলে শাহিন। তবে নিজে কখনো চাষাবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এই প্রথম তরমুজ চাষ করেছেন। তাও আবার মাচান-পদ্ধতিতে এবং সফলও হয়েছেন। তার সফলতা দেখে আমরাও ভাবছি চাষ করব।

শাহিন আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে সব স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি বাসায় অবসর কাটাই। দীর্ঘদিন আমি কোনো কাজ করিনি। ঘরেও ভালো লাগছিল না।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল হক স্যার কিছু ভিডিও আপলোড দিতেন। ভিডিওর বিষয় থাকে, কী করে অসময়ে বিভিন্ন সবজির আবাদ করা যায়। এরপর আমি আমিনুল হক স্যারের সঙ্গে তরমুজ আবাদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। স্যার আমাকে সব ধরনের দিকনির্দেশনা দেন কীভাবে করলে এই তরমুজ চাষে সাফল্যের মুখ দেখা যাবে।

মাত্র ৩০ দিনে আমার করা দুই জাতের তরমুজের ওজন প্রায় সাড়ে চার কেজির মতো। এতে আমার খরচ হয়েছে ৩৫ হাজারের মতো। আমাদের নিজস্ব জমি না থাকায় আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের জমিতে এই মাচান-পদ্ধতিতে আবাদ শুরু করি।

শাহিন বলেন, শিক্ষক হিসেবে তিনি আমাকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। তিনি যদি আমাকে সঠিক দিকনির্দেশনা না দিতেন, তাহলে হয়তো আমি এই সফলতা অর্জন করতে পারতাম না। আমি অন্যদেরও ঘরে বসে না থেকে সৃজনশীল বা উদ্ভাবনী কিছু করতে অনুরোধ করব।

এনএ