পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা হানিফ সরকার। মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) রাতে ছয়বার তার ঘুম ভেঙে গেছে। ঘুম ভাঙতেই চলে গেছেন নদীর পাড়ে। বার বার মনে হয়েছে, এই বুঝি পাড় ভেঙে গেল। গরুগুলো নদীর পানিতে তলিয়ে গেল।

শুধু হানিফ সরকার নয়, তার মতো নদীর দিকে তাকিয়ে বসে আছেন আফজাল সরকার। তার নিজের ভিটে গত রাতে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, নির্বাক দৃষ্টিতে তাকানো ছাড়া আর কি করার আছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, যা সম্বল ছিল তাও নদী রাতে নিয়ে গেছে। এখন আর কিছু বাকি নেই। যা আছে তা হলো প্রাণ। হয়ত এটিও এখন চলে যাবে।

জানা গেছে, দুই মাসে জাজিরার বড়কান্দি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ৮ নং ও ৭ নং ওয়ার্ডের কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। নদীর পাশে থাকা ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিয়েছে অনেকেই। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছে নদীপাড়ের মানুষ। কেউ ব্যস্ত ঘর সরানো নিয়ে, কেউ আবার বসে নিজের বাপ-দাদার ভিটে ভাঙার দৃশ্য দেখছেন। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই চুপচাপ। বেশিরভাগ সময় রাতে ভাঙন শুরু হয়। তখন পুরো এলাকার লোকজন একত্রিত হয়ে থাকে। জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা, কুন্ডের চর, পালের চর, জাজিরা, বিলাসপুর ইউনিয়নের ২০-২৫ টি গ্রামের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। এসব গ্রামের ৭০-৮০টি পরিবার এখন গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

কথা হয় সোকিনা বানুর সঙ্গে। তিনি ঘর সরাচ্ছে। বললেন, এই পর্যন্ত তিনবার নদীতে ঘর-বাড়ি বিলীন হলো। এখন সামনের স্কুলমাঠে গিয়ে উঠব। পরে ঠিক করবো কই যাব? 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার জাজিরায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। যে অংশেই নদীভাঙন দেখা যাচ্ছে সেই অংশে জিওব্যাগ ও জিওটিউব ব্যাগ ডাম্পিং করে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদীভাঙন কিছুটা রোধ করা যাচ্ছে। নদীতীরের জন্য আমরা একটি প্রকল্প জমা দিয়েছি। আশা করছি, এটি পাস হলেই স্থায়ী একটা সমাধান তাদের জন্য নিয়ে আসতে পারব।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি