বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সরকারি বাসভবনে হামলার সিসি টিভি ক্যামেরার একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০ সেকেন্ডের ওই ফুটেজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার অফিসের এক কর্মকর্তা। এছাড়াও তাদের কাছে হামলার পুরো ফুটেজ রয়েছে বলে তিনি জানান।

নাম প্রকাশ না করে ওই কর্মকর্তা বলেন, হামলার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের কাছে সমস্ত ফুটেজ সরবরাহ করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, বুধবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টায় বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ভেতর থেকে গেট আটকে রাখার চেষ্টা করা হলেও তারা গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। চার আনসার সদস্য তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। আনসার সদস্যদের চড়-থাপ্পড় মারেন হামলাকারীরা। এই পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার্থে এক আনসার সদস্যকে অস্ত্র তাক করে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।

বুধবার দিবাগত রাত ২টায় ইউএনও মুনিবুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৫/২০ জন বহিরাগত ছেলে আমার বাসভবন এলাকায় এসে ঘোরাফেরা করছিল। বিষয়টি আনসার সদস্যরা আমাকে অবহিত করেন। আমি আনসার সদস্যদের মাধ্যমে তাদের চলে যেতে বলি। তখন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে রাজীব হোসেন নামে একজন আমার বাসার সামনে চলে আসেন। আমি নিচে নামতে নামতে তিনি আমার অনুমতি ছাড়াই আমার ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েন। তিনি ব্যানার সরানোর বিষয়ে বলেন। তখন আমি বলি, এই এলাকাটি সরকারিভাবে সংরক্ষিত। আপনাদের যা করার কাল দিনে করবেন। এত রাতে এসব করা শোভনীয় নয়।

তাকে চলে যাওয়া জন্য জন্য বললেও তিনি যাচ্ছিলেন না। কিছুক্ষণ পর শাহরিয়ার বাবু নামে একজন আসেন। তিনি নিজেকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেন। তার সঙ্গে ৫০/৬০ জন লোক এসে আমাকে, আমার বাবা-মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর মধ্যে একজনের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তিনি আমার সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে থাকা লোকজন আমাকে বাসার মধ্যেই ঘিরে ধরছিল। তখন আমি আনসার সদস্যদের ইশারা করলে তারা এসে বাঁশি দেয়। তাতেও তারা যাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এ সময় আমি শাহরিয়ার বাবুকে আটকে রাখি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন, ইউএনওর বাসায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যখন হামলা করেন, তখন ওই এলাকায় সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে রাত ৩টায় নিজ বাসায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকদিন আগে একটি প্রেস কনফারেন্সে আমি ব্যানার নিয়ে কথা বলেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যানার অপসারণ করতে গেলে ইউএনও গুলি ছোড়ে। আমি নিজে সেখানে পরিচয় দিয়েছি, যে আমি সিটি করপোরেশনের মেয়র। তারপরও গুলি ছোড়া হলো। গুলি আমার গায়ে লেগেছে, যদিও আমি গুলিবিদ্ধ হইনি। এরপর আমি সেখান থেকে চলে আসি।

মেয়র দাবি করেন, ইউএনওর বাসভবনে কোনো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করেনি। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর