আনোয়ারা বেগমের (৫০) স্বামী একাব্বর আলী প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। এক প্রতিবন্ধী মেয়েসহ দুই মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। তবে ৬৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি এখন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। পেয়েছেন জাতীয় পরিচয়পত্রও।

ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময়ের ৬ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ৩ বছর আগে কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় স্বপ্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে ঔষধি বাসকগাছের পাতা চাষ করে আনোয়ারা আজ স্বাবলম্বী হয়ে বসবাস করছেন ফুলবাড়ি উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায়। ওই এলাকার এ নারীর মতো আরও ১৫ জন নারী হয়েছেন স্বাবলম্বী।

আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘হামার জেলার আগের সুলতানা পারভীন ডিসি ম্যাডাম, দাশিয়ারছড়ার বিভিন্ন সড়কে ১৬ হাজার বাসকপাতার গাছ নাগে দিয়া গেছে, হামরা ১৬ জন মহিলা গাছগুলার যত্ন করছি। বাসকপাতার গাছ বড় হবার পর ৩-৪ মাস পর পর বাসকপাতা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। যতদিন গাছ থাকবে ততদিন আমার আয় থাকবে। এখন পর্যন্ত আমি প্রায় ১০ হাজার টাকা ভাগে পাইছি।’

শুধু আনোয়ারা বেগম নন আরও ১৫ জন নারী এ ঔষধি গাছ বাসকপাতা পরিচর্যা করে সংসারের অভাব দূর করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। এসব নারীরাও জানালেন একই কথা।

এদের মধ্যে আরেকজন সাবিত্রী নামের এক নারী বলেন, ডিসি (সুলতানা পারভীন) ম্যাডাম বাসকপাতার গাছ নাগে দিয়া গেইছে। এই বাসকপাতা বিক্রি করি সংসারের খরচও করি কিছু জমাও করি। তিন মাস পর পর পাতা ছিড়ি সেই পাতা রোদে শুকাই। পরে ৪০ টাকা কেজিতে ওষুধ কোম্পানির লোকজন নিয়া যায়। এই বাসকপাতা বিক্রির টাকা দিয়া ভালোই চলছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন বছর আগে কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন স্বপ্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে দাশিয়ারছড়ায় অস্বচ্ছল ও বিধবা নারীদের ছিটমহলের ভেতর ৮ কিলোমিটার সড়কের দু-পাশে ১৬ হাজার ঔষধি বাসকগাছের চারা রোপণ করে দেন। এসব বাসকপাতার গাছের পরিচর্যা শুরু করেন সেখানকারই কিছু নারী। পরে আস্তে আস্তে এই বাসকপাতা বিক্রি করে ১৬ জন হতদরিদ্র নারী হয়েছেন স্বাবলম্বী।

ছিটমহলের বাসিন্দা নাসির হোসেন বলেন, ছিটমহলের বিভিন্ন রাস্তার দু-ধারে সারিবদ্ধ করে বাসকপাতা চারা রোপণ করা হয়েছে। এই বাসকপাতার গাছগুলো পরির্চযা করছেন হতদরিদ্র কিছু নারী। তারা এখন বাসকপাতা বিক্রি করে ভালোই লাভবান হচ্ছেন।

স্বপ্ন প্রজেক্টের ফুলবাড়ি সদর ইউনিয়ন ফ্যাসিলেটর হেলেনা বেগম জানান, ছিটমহলের বিভিন্ন রাস্তায় ১৬ হাজার বাসকপাতার চারা রোপণ করা হয়েছে। ১০ বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এখানকারেই অসহায় ও হতদরিদ্র নারীদের।

এসব নারী ৩-৪ মাস পর পর বাসকপাতা বিক্রি করে দূর করছে তাদের অভাব, হচ্ছেন স্বাবলম্বী। বাসকগাছ কেউ কেটে না দিলে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে। তাছাড়াও বাসকপাতা চাষে কীটনাশক ও পরিচর্যা লাগে না।

ফুলবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ছিটমহলে বাসকপাতা চাষে এখানাকার কিছু নারীর আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। এসব নারীর দেখে অন্যরাও বাসকপাতা চাষ করছেন। বাসক পাতাগুলো কেজি দরে ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিরা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, দাশিয়ারছড়া ছিটমহলে ব্যাপক পরিসরে বাসকপাতা চাষ হয়েছে। এখান থেকে বাসকপাতা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে ওষুধ কোম্পানির লোকজন।

সাবেক ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় বর্তমানে সাড়ে ১৪ হাজার মানুষ বসবাস করছে। গত ৬ বছরে সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অনেকটা এগিয়ে গেছে সাবেক এই ছিটমহলটি।

এমএসআর