হতদরিদ্র রূপবান বেওয়া

‘মুই একটা কম্বলের জন্য চোখের পানি পর্যন্ত ফেলাইছোং। কাইও একটা কম্বল ও দ্যাইল না। মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছোত ও গেইছোং তাও কম্বল পাং নাই। সেইদিন আমার এডাই কম্বল দিছে মুই গেছনু কাইও দেয় নাই, কান্দি আসছোং।’

একটি কম্বলের জন্য এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের সিতাই ঝাড় গ্রামের রূপবান বেওয়া (৬০)।

স্থানীয় আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) কুড়িগ্রাম পৌর শহরের পুরাতন পশু হাসপাতাল মোড়ে কথা হয় রূপবান বেওয়ার সঙ্গে। ক্ষোভ ও কান্নজড়িত কণ্ঠে তিনি এসব কথা বলেন।

রূপবান বলেন, ‘মোড় স্বামী অনেক দিন হইলো মরি গেইছে। মোর কোনো জায়গাজমি নাই। ভাইয়ের বাড়িত একটা ভাঙা ঘরোত থাকোং। মোর বেটা-বেটি কাইও নাই। মোড় এখনা বয়স্ক ভাতাও নাই। বিধবা ভাতাও নাই। কতজনে ঘর দিবারও চাইছিল, দেয় নাই। তোমরা দেহেন নাই বানোত (বন্যায়) কী কষ্ট করছোং। এলা সারাদিন ভিক্ষা করি ১০০-১৫০ টাকা হয়। তাহে দিয়া কি আর চলে? বাড়ি থাকি কুড়িগ্রাম যাইতে আসতে ৪০ ট্যাহা নাগে।’

চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে হাড়ভাঙা শীতে জবুথবু কুড়িগ্রামের মানুষ। শীত নিবারণের প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলের মানুষ গরম কাপড় পরিধান করেছে। কেউবা খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে। এ অবস্থায় সন্ধ্যা নামার আগেই ঘন কুয়াশা ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। তা অব্যাহত থাকছে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। কিন্তু এমন শীতের মধ্যে পাতলা একটি কাপড় শরীরে জড়িয়ে খালি পায়ে ভিক্ষা করছেন রূপবান বেওয়া।

বৃদ্ধ রূপবান বেওয়া কম্বল না পেলে আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব। তাকে কম্বলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

নিলুফা ইয়াসমিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

স্থানীয় আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, কুড়িগ্রামে মৃধু ও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। কুড়িগ্রামে শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

রূপবান বেওয়া বিষয়ে কথা হলে পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিবছরই রূপবান বেওয়াকে কম্বল দেওয়া হয়। এ বছর যদি কম্বল না পেয়ে থাকেন, তাহলে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃদ্ধ রূপবান বেওয়া কম্বল না পেলে আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব। তাকে কম্বলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

এনএ