কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বৃদ্ধি পেয়েছে গড়াই নদের পানি। সোমবার (২৩ আগস্ট) সকালে গড়াই নদের পানিপ্রবাহ পয়েন্টে ১২ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

রোববার (২২ আগস্ট) ছিল ১২ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার। আর শনিবারের (২১ আগস্ট) চেয়ে ৪ সেন্টিমিটার বেশি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার টিংকু বলেন, সোমবার গড়াই নদের পানি ১২ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকালের ৬ সেন্টিমিটার বেশি।

এদিকে গড়াই নদের যৌবন ফিরলেও দুর্ভোগ বেড়েছে নৌকা পারাপারে। কারণ প্লাবিত হয়ে গেছে যদুবয়রা নৌকাঘাট। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লালন আবাসনের ৫১টি পরিবার। এ ছাড়া পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের তেবাড়িয়ায় ৩০টি ও ৫ নং ওয়ার্ডের সেরকান্দি এলাকার আরও ৫ থেকে ৭টি পরিবার পানিতে প্লাবিত হয়েছেন।

জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলীয় যদুবয়রা, পান্টি, বাগুলাট, চাদুপর ও চাপড়া এই পাঁচ ইউনিয়নে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। তারা গড়াই নদে নৌকাযোগে উপজেলা শহর, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ ও থানাসহ যাবতীয় প্রয়োজন মেটায়।

অন্যান্য এলাকার মানুষও দক্ষিণাঞ্চলীয়দের নৌকাযোগে যোগাযোগ রক্ষা করে। কিন্তু নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌকাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এতে হাঁটুসমান পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করছে পারাপারকারীরা। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা।

রোববার সকালে গড়াই নদের যদুবয়রা খেয়াঘাট পয়েন্টে সরেজমিন দেখা যায়, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাট প্লাবিত হয়েছে। হাঁটুসমান পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করছে জনগণ ও যানবাহন। উল্টে পড়ছে যানবাহন, ছিটকে পড়ছে মানুষ। এক হাতে জুতা-স্যান্ডেল আর অন্য হাতে পরনের কাপড় ধরে চলাচল করছে তারা।

এ বিষয়ে নৌকাঘাট দিয়ে চলাচলকারী ও স্কুলশিক্ষক খসরুজ্জামান বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে ঘাটে পানি। হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে মানুষ। মালবাহী যানবাহনগুলো উল্টে যাচ্ছে। পুরুষরা দুর্ভোগ নিয়ে কোনোমতে চলাচল করলেও নারী ও শিশুদের বিপদের শেষ নেই।

উত্তর যদুবয়রা গ্রামের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বলেন, টাকা দ্বিগুণ নিলেও ঘাটের সেবা নিম্নমানের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলছে। নারীদের দুঃখের শেষ নেই।

পান্টি ইউনিয়নের বাসিন্দা শাকিল হোসেন বলেন, শিশুসন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। বুকে শিশু আর এক হাতে স্যান্ডেল। শরীরের অর্ধেক কাপড় ভিজে গেছে। এভাবে কি চলাচল করা যায়?

নৌকাঘাটের শেয়ার হোল্ডার কামরুজ্জামান আইয়ুব বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাট প্লাবিত হয়েছে। এতে পারাপারে খুব ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি বাঁশের চরাট দিয়ে দুর্ভোগ কমানোর।

যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শরিফুল আলম বলেন, যদুবয়রা নৌকাঘাটে যাচ্ছেতাই অবস্থা। মানুষ অনেকটা উলঙ্গভাবে পার হচ্ছে। এদৃশ্য আর দেখা যায় না। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সাংসদ ও জেলা পরিষদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী সালাউদ্দীন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সপ্তাহে গড়াই নদে ১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানিবন্দি এলাকা নিয়ে পাউবো কাজ করছে। আর নৌকাঘাটে দুর্ভোগ নিরসন নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হয়েছে। আশা করছি খুব অল্প সময়ে সমাধান হবে।

রাজু আহমেদ/এনএ