যশোরের কেশবপুর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলামসহ তিন জনের নামে চাঁদাবাজির মামলা করায় বাদী ও সাক্ষীদের খুন-গুমের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মামলা তুলে না নেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা বাদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ। সোমবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন কেশবপুরের ব্রক্ষ্মকাটি গ্রামের মিশাল ক্যাবল নেটওয়ার্ক অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজের মালিক খন্দকার মফিদুল ইসলাম।

১৭ আগস্ট তিনি যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মেয়র রফিকুল ইসলামসহ তিন জনের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন। মামলাটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম মল্লিক গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মফিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে উপজেলার ব্রক্ষ্মকাটি, বালিয়াডাঙ্গা ও রামচন্দ্রপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে সুনামের সঙ্গে ডিস (ক্যাবল) ব্যবসা করে আসছি। চলতি বছরের শুরুর দিকে পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম তার দুই সহযোগী মফিজুর রহমান ও আলমগীর সিদ্দিক টিটুকে পাঠিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। মাসে মাসে চাঁদার টাকা না দিলে ভয়ভীতি দেখাত তারা। 

তিনি জানান, শান্তিতে ব্যবসা করতে মফিজুর ও আলমগীরকে এক লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছেন। এর কিছুদিন পর আলমগীর এক লাখ টাকা নিয়ে মেয়রের সঙ্গে তাকে দেখা করতে বলেন। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় গত ১৫ জুন মফিজুলকে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে একা পেয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। ৩০ জুলাই আসামিরা লোকজন নিয়ে তার ডিস ব্যবসার অফিসে গিয়ে মারধর করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা না দিলে খুন-জখম করবে বলে হুমকি দেয়। এরমধ্যে লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা চলে যায়। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করলে আমার বাড়িতে মেয়রের সন্ত্রাসী বাহিনী অব্যাহত জীবননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আমার ডিস ব্যবসাটি দখল করে গ্রাহকদের লাইন ভাড়া আদায় করতে চাপ সৃষ্টি করছে। মেয়রের সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে আমার পরিবার এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। পরিবারের নিরাপত্তা ও ব্যবসা ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী খন্দকার মফিদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত পৌর মেয়র রফিকুল ইসলামের ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে ১৮ আগস্ট মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, বাদীর সঙ্গে বহু দিন দেখা হয়নি। চাঁদা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমি শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাসী, তাই কখনও সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেইনি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যাদের রাজনীতির মূল দর্শন, তারা নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে মিথ্যা মামলা করে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এই মনগড়া অভিযোগ করেছেন।

বিতর্ক যেন কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলামের পিছু ছাড়ছে না। তার মদ্যপানের ছবি ফেসবুকে ভাইরালকে কেন্দ্র করে সন্দেহজনকভাবে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান মুকুলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকির কল রেকর্ড ভাইরালের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরির রেশ না কাটতেই নতুন করে যোগ হয়েছে চাঁদাবাজি-দখলবাজির মতো মামলা।

জাহিদ হাসান/এসএসএইচ