বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে তীব্র স্রোতের কারণে ১৮ আগস্ট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেরি চলাচলের বিকল্প পথ হিসেবে শরীয়তপুরের জাজিরায় ফেরিঘাট স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) থেকে মাঝিরঘাট-শিমুলিয়া রুটে ফেরি চলবে।

বুধবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফেরিঘাটের পল্টুন বসিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত রয়েছে যার কারণে ফেরি চলাচলে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ না রাখতে পেরে পদ্মাসেতুর পিলারে ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটে। গত ২০ ও ২৩ জুলাই ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারে এবং ৯ ও ১৩ আগস্ট ১০ নম্বর পিলারে আঘাত করে রো রো ফেরি। এতে করে গত ১৮ আগস্ট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্রোত না কমা পর্যন্ত ওই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২০ জেলার যানবাহনের চলাচল বিঘ্ন হচ্ছিল। তাই জরুরি ভিত্তিতে যানবাহন পারাপারের জন্য জাজিরার মাঝিরঘাটে ফেরিঘাট নির্মাণ করা হয়েছ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জাজিরার মাঝিরঘাট সড়কের মাথায় পদ্মা নদীতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। বালু ও ইট দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রশস্ত ফেরিতে ওঠার জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। পল্টুন বসানো হয়েছে। 

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। এতে করে স্রোতের তীব্রতাও বেড়েছে। ফেরি বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের বাংলাবাজর ঘাটে নেমে সেখান থেকে লঞ্চে নদী পার হয়ে ঢাকা যেতে হচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হচ্ছিল আবার ভোগান্তিও ছিল বেশি। এ ছাড়া ফেরি বন্ধ থাকায় ছোট যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে শরীয়তপুর-চাঁদপুর বা দৌলতদিয়া দিয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছিল। পদ্মায় ফেরি চলাচল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে যৌথ সার্ভে সম্পন্ন করা হয়।

 সার্ভের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পদ্মা নদীর স্রোতের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। তাই জরুরি সেবা চালু করার লক্ষ্যে গত ১৯ আগস্ট সার্ভের দল শরীয়তপুরের মাঝিরঘাট পরিদর্শন করে পন্টুন বসানোর স্থান নির্বাচন করেন। গত ২০ আগস্ট থেকে ঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি নতুন রো রো ফেরি পন্টুন মাঝিরঘাটে সংযুক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নেছার উদ্দিন মাদবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, শরীয়তপুরে এই অংশ থেকে মাওয়া ফেরি ঘাটের দূরত্ব কম। এতে দ্রুত ফেরি চলাচল করতে পারবে। ফেরি পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে চলাচল করবে। লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যার পর ঢাকা যেতে পারের না স্থানীয়রা। কিন্তু এখন ফেরি হওয়াতে আর সমস্যা হবে না। পল্টুন বসানোর কাজ শেষ হলে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকাল থেকে ফেরি চলাচল শুরু হবে।

নির্মাণ কাজের ঠিকাদার আব্দুল সামাদ হাওলাদার বলেন, গত ২০ আগস্ট ফেরিঘাটের নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলাম। বৃষ্টির কারণে কাজের কিছুটা ধীরগতি হয়। শ্রমিক বাড়িয়ে কাজটি দ্রুত শেষ করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে আমাদের শেষ হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর কারিগরি সহকারী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সন্ধ্যার দিকে পল্টুন বসানোর মাধ্যমে ঘাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা ফেরি চলাচলের। বৃহস্পতিবার যেকোনো সময় পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচল করবে। নদীতে কোথাও কোনো নাব্যতা সংকট রয়েছে কি-না যাচাই করা হবে। যদি থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘাট দিয়ে শুধু ছোট গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করবে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/ওএফ