রোববার বিকেল ৩টায় তা বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে

যমুনার উজানের ঢলে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রোববার (২৯ আগস্ট) বিকেল ৩টা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপুর গেজ রিডার স্টেশনে পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৫৬ গ্রামের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে প্রায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও দূরবর্তী চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ৬১ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় সারিয়াকান্দি উপজেলা এলাকায় ৬১ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ৫৬টি গ্রামের ৯ হাজার ৫০০টি পরিবারের ৩৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। পাশের ধুনট উপজেলায় এখনো ফসলি জমি আক্রান্ত না হলেও চরবেষ্টিত দুটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের প্রায় ৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেখানেও ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, উজানে বৃষ্টির কারণে যমুনার পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে নদীতীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ রক্ষা বাঁধ ভাঙার কোনো আশঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকেই যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করে। তবে ২৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে। রোববার বিকেল ৩টায় তা বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীতীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ-সংলগ্ন নিচু এলাকা এবং চরাঞ্চলের মোট ৫৬টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪টি গ্রামে পানি ঢুকেছে চরবেষ্টিত বোহাইল ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে। এর পাশের কাজলা ইউনিয়ন এবং দুর্গম চর চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১০টি করে আরও ২০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের ৮টি, পাশের সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের ৬টি, চরবেষ্টিত কর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের ৫টি এবং পাশের ধুনট উপজেলা সীমান্ত সংলগ্ন চন্দনবাইশা ইউনিয়নের আরও ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ-সংলগ্ন ১টি মাদ্রাসা ও ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে।

চর কার্ণিবাড়ি, চালুয়াবাড়ী এলাকার বাসিন্দারা জানান, চরাঞ্চলের বসত-বাড়িগুলো উঁচুতে থাকায় এখনো পানি ঢোকেনি। নদীরতীরবর্তী হওয়ায় তাদের ফসলি জমিগুলো তলিয়ে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের বাসিন্দা সায়মন, শামিম, রফিকুল, ময়েজ আলী জানান, নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ-সংলগ্ন নিচু জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় সেগুলো ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম ঢাকা পোস্টকে জানান, বন্যায় ৫০ হেক্টর রোপা আমনসহ এ পর্যন্ত ৬১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সঙ্গে নদীর তীরবর্তি নিম্নাঞ্চলের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) সাইফুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় বিতরণের জন্য ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তা উত্তোলনও করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে রোববার থেকে তা বিতরণ শুরু হবে।

স্থানীয় সূত্র আরও বলছে, ধুনটে যমুনায় পানিবৃদ্ধির কারণে এর আগে ধসে যাওয়া ভাঙন প্রতিরোধক বানিয়াযান স্পারের মেরামতকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার শহরাবাড়ি, শিমুলবাড়ি, কৈয়াগাড়ি এলাকার তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। আর পানি ঢুকতে শুরু করছে শহরাবাড়ি, শিমুলবাড়ি, বানিয়াযান, বরইতলী, কৈয়াগাড়ি, ভান্ডারবাড়ি, পুকুরিয়া ও ভুতবাড়ি গ্রামের বাড়িঘরগুলোতে।

এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতীরবর্তী মানুষরা নিরাপদ আশ্রয়ে জন্য ছুটে চলছে। কেউ কেউ বন্যার্ত আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছে পরিবার নিয়ে।

সাখাওয়াত হোসেন জনি/এনএ