দিন-রাত যেকোনো সময় ফোন করলেই বিনামূল্যে করোনা রোগীর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। করোনা আক্রান্ত রোগীর দাফনও করেন পরম যত্নে। করোনাকালজুড়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসহায়তা। মহামারির এই সময়ে পরিবারের লোকজন দূরে সরে গেলেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ‘ছয়ানী স্বেচ্ছাসেবক টিম’। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।

রোববার (২৯ আগস্ট) রাত ২টা ৪০ মিনিটে করোনা আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়। ফোন আসে ছয়ানী স্বেচ্ছাসেবক টিমের মুঠোফোন ০১৮১৪-৭১৮১৯৫ নম্বরে। ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয় ‘ছয়ানী স্বেচ্ছাসেবক টিম’।

এ সংগঠনের টিম লিডার মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রামের মানুষ করোনা রোগীকে দেখলে এড়িয়ে যান। সন্তান তার বাবার কাছে যান না। কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাকে দাফন করার মতো লোক পাওয়া যায় না। তার স্বজনরা পর্যন্ত পালিয়ে যায়। শ্বাসকষ্টের রোগীদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করি। যাদের ঘরে খাবার নেই তাদের খাবার পৌঁছে দেই।

তিনি আরও বলেন, এই সংগঠনে অর্ধশতাধিক সদস্য রয়েছে। সবাই তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সমাজের জন্য ভালো কাজ করছেন। বিভিন্ন সংকটকালীন পরিস্থিতিতে সদস্যরা একযোগে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছেন। আমাদের উদ্দেশ্য মানুষকে সাহায্য করা।

স্বেচ্ছাসেবক আমির হামজা নাজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক দিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীকে দাফন করতে হবে। এ সময় স্বজনরা লাশের কাছে আসেনি। এমন প্রতিকূলতার মধ্যে লাশ দাফন করে টিমের সদস্যরা। আমাদের ইউনিয়নে মোট ৩০ জন করোনা রোগীর লাশ দাফন করেছি।

সংগঠনের  সেবা পাওয়া হাসান আরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ২টায় আমার মায়ের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় আমি হটলাইনে ফোন দেই। ফোন দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে ছয়ানী স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হয়। আমাদের নোয়াখালী জেলার জন্য এই স্বেচ্ছাসেবক টিম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সংগঠনের টিম লিডার মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি বলেই সামজিক দায়বদ্ধতা থেকেই সুখে-দুঃখে সমাজের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমাদের টিমের দৃঢ় মনোবল আছে, যতই ক্লান্তি আসুক আমাদের এই মানবিক কাজটি থামিয়ে রাখব না।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন অক্সিজেনের একাধিক ফোন আসে।২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে এ পর্যন্ত ৩৫০ জন করোনা রোগী অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। পাঁচ-ছয়টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সব সময় মজুদ রাখতে হয়।

ছয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ছয়ানী স্বেচ্ছাসেবক টিম’ এই ইউনিয়নের অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও দাফনের কাজ করে যাচ্ছে। টাকার অভাবে বিয়ে হচ্ছে না এমন পরিবারের পাশেও দাঁড়াচ্ছে। আমি আমার স্থান থেকে তাদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকবো।

বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেগমগঞ্জে করোনা সংক্রমণের জটিল সময়ে ছয়ানী স্বেচ্ছাসেবক টিমের অক্সিজেনসেবা পেয়ে অসহায় রোগীরা উপকৃত হয়েছেন। এতে হাসপাতালের ওপর চাপ কমেছে।

নোয়াখালী-৩ আসনের (বেগমগঞ্জ) সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ বলেন, ‘ছয়ানী স্বেচ্ছাসেবক টিম’ শুধু করোনার সময় নয়, তারা সবসময় এলাকার গরিব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেয়। 

হাসিব আল আমিন/এসপি