মাথা থেকে ঝরে পড়া চুল এখন আর ফেলনা নয়। এগুলো রফতানি হচ্ছে বিদেশে। তাও আবার আকর্ষণীয় মূল্যে। প্রতি কেজি চুল ৩-৪ হাজার টাকা কেজি দরে কিনে পরিমার্জন করে ১৫-২০ হাজার কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আর এই পরিত্যক্ত চুল ভাগ্য বদলে দিয়েছে কয়েকশ মানুষের। এক সময়ের অভাবী মানুষগুলো এখন চুল শিল্পে কাজ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী।

এমনই এক শিল্প গড়ে উঠেছে মাগুরার শালিখা উপজেলার বৈখোলা গ্রামে। এখানে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো কারখানা। এই গ্রামের কেউ চুলের ফেরিওয়ালা, কেউ চুলের কারিগর, কেউ চুলের প্রসেস মাস্টার, কেউবা চুলের ডিজাইনার আবার কেউবা চুলের মহাজন।

এখানকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ চুল শিল্পে কাজ করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই চুল শিল্প একদিন বড় ধরনের আয়বর্ধক শিল্পে পরিণত হতে পারে এবং অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে সোমবার (৩০ আগস্ট) সকালে বৈখোলা গ্রামে দেখা গেছে, এই গ্রামে প্রায় ৪০-৫০টি কারখানা রয়েছে। যেখানে নারী-পুরুষ মিলেমিশে কাজ করছেন। করোনার কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিশুরাও এ কাজে সাহায্য করছে তাদের বাবা-মাকে।

জানতে চাইলে বৈখোলা গ্রামের একটি বড় কারখানার মালিক রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই গ্রামের বেশ কয়েকজন ফেরিওয়ালা মাগুরা, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝরে পড়া চুল ৩-৪ হাজার টাকা কেজি দরে কিনে আনে। পরে আমাদের কাছে ৬-৭ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। 

কারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা হুইল পাউডার, নারকেল তেল দিয়ে রিফাইন করে সে চুল দিয়ে পটচুল এবং টুপি তৈরি করেন। এরপর তা ঢাকার উত্তরা, বারিধারাসহ চীনা কোম্পানির ক্রয় সেন্টারে প্রতি কেজি ১৫-২০ হাজার টাকা দরে বিকি করা হয়। প্রতি সপ্তাহে এখান থেকে প্রসেস করা অনেক চুল ঢাকায় পাঠানো হয়।

রবিউলের কারখানায় কাজ করেন মাসুদ রানা। তিনি পাবনা থেকে এখানে এসে কাজ করছেন। তিনি বলেন, মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে আমি এই কারখানায় কাজ করি। আমার পরিবার এখন ভালোভাবেই চলছে।

আরেকটি কারখানায় কাজ করেন সখিরন বিবি। আলাপচারিতার এক ফাঁকে তিনি বলেন, আমার বিয়ের পর এই গ্রামে আসি। দেখি এই গ্রামের অনেক লোক চুলের কাজ করে সংসার চালায়। আমি এখন মাসে ৮-১০ হাজার টাকার কাজ করি।

১৩ বছর বয়সী সোহেল বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি চুলের কাজ করি। নিজের রোজগার করা টাকা দিয়ে আমার বই খাতা ও জামা-কাপড়সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছি।

বৈখোলা গ্রামের আরেকটি কারখানার মালিক বদরুল হোসেন। তিনি বলেন, এ কাজে আমাদের অনেক টাকা পয়সা লাগে। সরকার যদি আমাদের বিনা সুদে ঋণ দিতে তাহলে আমরা আরও ভালোভাবে করাখানায় অত্যাধুনিক মেশিন বসাতে পারতাম।

সীমা বিশ্বাস নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, আমরা যা নোজগার (রোজগার) করি তাতে হাত খরচসহ সংসারের অনেক কাজে বিটা মানষির (পুরুষ মানুষ) কাছে হাত পাতা নাগে (লাগে) না।

বিসিক মাগুরা অঞ্চলের উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সেখানে এখনো যেতে পারিনি। খুব তাড়াতাড়ি আমি সেখানে পরিদর্শনে যাব। প্রয়োজন হলে তাদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করব। চুল শিল্পের বিকাশ প্রয়োজনে উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। কারণ চুল বিদেশে রফতানি হওয়ায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে।

এসপি