সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ নলতা ইউনিয়নের পূর্ব নলতা গ্রামের জাহাঙ্গীর বিশ্বাস ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। ভারতীয় গোয়েন্দাদের অভিযোগ, জাহাঙ্গীর হোসেন তালেবান সমর্থক জঙ্গি। কিছুসংখ্যক বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি জোট গঠন করে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছিলেন তিনি।

তবে বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, পরিবারটি হতদরিদ্র। আর জাহাঙ্গীর হোসেন একজন নির্মাণশ্রমিক। রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। প্রাথমিক তদন্তের এই পরিবার ও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

জাহাঙ্গীর হোসেন (২৭) কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নলতা গ্রামের জোহর আলী বিশ্বাসের ছেলে। তার বাবা ভ্যানচালক। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই আলম বিশ্বাস ও ছোট ভাই জাকির বিশ্বাস দিনমজুর। দুই বোনের মধ্যে একজন মারা গেছেন।

ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশনের বিপরীতে ভারতের বসিরহাট জেলার ঘোজাডাঙ্গা সীমান্ত থেকে জাহাঙ্গীর বিশ্বাসকে আটক করা হয়। ঘোজাডাঙায় বিএসএফএর ১৫৩ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা তাকে আটক করে। চেন্নাই থেকে গোয়েন্দাদের পাঠানো ছবি দেখে মিল পাওয়ায় জাহাঙ্গীরকে আটক করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট থানায় সোপর্দ করা হয়।

ভারতীয় আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের সঙ্গে তালেবানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিছুসংখ্যক বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি জোট গঠন করে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছিলেন তিনি। খবরটি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়ায়।

তবে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন দাবির বিষয়টি ভিত্তিহীন বলছেন জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের এলাকার বাসিন্দারা।

কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের পরিবারটি হতদরিদ্র। রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই তাদের। জাহাঙ্গীরের বাবা ভ্যানচালক। কাজের সন্ধানে আট বছর আগে ভারতে যায় সে। সেখানে গিয়ে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করত। বাংলাদেশে ফিরে আসার সময় তাকে আটক করে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার সঙ্গে তালেবান বা জঙ্গি সম্পৃক্ততা, এটা আমাদের বিশ্বাস হয় না।

জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের বাবা জোহর আলী বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ভ্যান চালাই। ছেলেটি আট বছর আগে ভারতে গিয়েছিল। সেখানে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করত। মাঝেমধ্যে বাড়িতে কিছু টাকা পাঠাত। হঠাৎ শুনছি, তালেবান সমর্থক জঙ্গি হিসেবে গ্রেফতার করেছে ভারতে। ভারতে আমার স্বজন কেউ নেই। ছেলেকে কীভাবে জেল থেকে ছাড়াব জানি না। টাকাপয়সাও নেই আমার। কী করব বুঝতে পারছি না। আমি নিরুপায় হয়ে পড়েছি।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে দাবি করছি আমার ছেলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তদন্ত করে দেখুক, কোনো অপরাধ পায় কি না। অপরাধী না হলে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করুক। আমরা তো বাংলাদেশের মানুষ। কাজ করতে ভারতে গেলে কেন এভাবে ফাঁসাবে?

জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের বোন আজমিরা খাতুন বলেন, ভারত থেকে একজন উকিল ফোন দিয়ে বলেছে, জাহাঙ্গীরকে আট দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। ও তালেবান বলে কোনো উকিল পাশে দাঁড়াতে চাইছে না। আমার ভাই অসুস্থ হওয়ায় বাড়িতে ফিরছিল। ফেরার সময় তাকে গ্রেফতার করে। আমার ভাই নির্দোষ। ভাইয়ের মুখটা আর দেখতে পাব কি না জানি না। আমাদের কেউ ভারতে যাবে, তেমন সামর্থ্যও নেই।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, পরিবারটি একেবারেই হতদরিদ্র। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর বিশ্বাস। সেখান থেকে ফিরে আসার পথে ভারতীয় আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হতে গ্রেফতার হয় সে।

তিনি বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় খোঁজখবর নিয়েও প্রাথমিক তদন্তের এই পরিবার ও জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিবারটির অতিসাধারণ। ওই পরিবার ও ভারতে তালেবান সমর্থনে গ্রেফতার হওয়া জাহাঙ্গীরের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিরুদ্ধে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ভারতীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

আকরামুল ইসলাম/এনএ